অনেক দিন ধরেই লোকমুখে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার নওদাবগা গ্রামের সাইবানি বিবির দরগার কথা শুনে আসছি। দরগাটির কথা শুনে দেখার ইচ্ছা আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না। একদিন ঠিক করে খুব সকালবেলা বেড়িয়ে পড়লাম দরগাটি দেখতে।
সোনাতলা থেকে আটো ভ্যানে চরে ১ ঘণ্টার আঁকা-বাঁকা পথ পেরিয়ে চলে এলাম সাইবানি বিবির দরগায়। লোকমুখে যা শুনেছি যায়গাটি তার চেয়েও অধিক সুন্দর। অটো ভ্যান থেকে নেমেই চোখে পড়লো একটি জামে মসজিদ। মসজিদের পাশেই বারো
একর জায়গা জুড়ে সোনাতলার জোড়গাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আমান উল্লাহ টেপার বসতবাড়ি। আর এই বসতবাড়িতেই দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র আকৃতির দুটি দরগা। আর এই দরগা দুটিই সাইবানি বিবির দরগা নামে পরিচিত।
ছবি : সাজেদুর আবেদীন শান্ত দরগা দুটির চারপাশে ঘন সবুজ অরণ্য। যেনো সবুজে সবুজে সুশোভিত আর এরই মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সাইবানি বিবির দরগা। এর একটির দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট, অপরটির দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। পুরনো এই দরগা দুটি চমৎকার একটি নিদর্শন। একটিতে বড় ও উঁচু
আকুতির গম্বুজ থাকলেও অন্যটিও প্রায় গোলাকার আদলে তৈরি। দুটি দরগাতেই টেরাকোটার (পোড়ামাটির ফলক) কাজ করা। দরগাগুলোর চারপাশের তিন পাশেই ছোট ছোট প্রবেশপথ। ভিতরে দুই বা তিনজন অবস্থান করার মতো জায়গা। দেখে মনে হয় দরগা দুটি মোঘল স্থাপত্য রীতি অনুসারে নির্মিত।
দেখতে অনেকটা শিয়া ধর্মাবলম্বীদের ইমামবাড়ার মতো। বর্তমানে এর অবস্থা দেখেই বোঝা যায় যে অতীতে এর জৌলুস ছিলো প্রখর। সৌন্দর্যে ছিলো অপরূপ। প্রায় চারশো বছর পরেও এখনও তার জৌলুস টিকে রাখতে
চেষ্টা করেছে দরগা দুটি। যদিও দরগা দুটির পলেস্তার গুলো ওঠে যাচ্ছে। ইট গুলোতে লোনা ধরেছে। তারপরেও অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনটিকে। দরগাগুলোর দেওয়ালে হাত রেখেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হলো। মনে হলো যেনো আমি অতীত স্পর্শ করতে পারলাম। ফিরে গেলাম সেই সময়ে।
জানা যায়, এ দরগাটিকে দীর্ঘদিন ‘পুরাতন ইবাদতখানা’ বলা হলেও এতদিন অগোচরে ছিল বিবি সাইবানির কথা। সাবেক চেয়ারম্যান শাহ্ আমান উল্লাহ টেপা এর পূর্ব পুরুষ আনার আকন্দ সোনাতলার নওদাবগায় এসে বসবাস শুরু করেন। আনার আকন্দের পুত্রবধূ বিবি সাইবানি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ
মহিলা। তিনি বেশিরভাগ সময় ইবাদত-বন্দেগী ও আধ্যাত্মিকতা চর্চায় ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর আধ্যাত্মিকতা চর্চা বিশেষত মোরাকাবা ও মোসাহাদা করার জন্য ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় দশকে মোঘল রীতিতে মাটি থেকে প্রায় দুই ফুট উঁচু ইটের ঢিবির উপর ছোট্ট পরিসরের দুইকক্ষ বিশিষ্ট এ দরগাটি নির্মাণ করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন বিবি সাইবানির স্বামী দেওয়ান আকন্দ (আনার আকন্দের পুত্র)।
ভ্রমণপিপাসুরা চাইলেই এই অনন্য নিদর্শনটি ঘুরে দেখতে পারেন। রাজধানী ঢাকা থেকে বগুড়া জেলায় এসে নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে গাবতলি-সোনাতলা ভায়া রোড ধরে সিএনজি বা অটোতে করে সরাসরি যাওয়া যাবে এই দরগায়।