বছর শেষে জামাইকে দাওয়াত করা হবে শ্বশুরবাড়িতে। দেওয়া হবে কয়েক হাজার টাকা। সেই টাকায় কেনা বড় মাছ, মিষ্টিসহ মুখরোচক খাবার খেয়ে আনন্দ উদযাপন করবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গত দুই বছর ধরে জামালপুরের মাদারগঞ্জে শুরু হয়েছে এমন ব্যতিক্রমী মেলা- ‘জামাই মেলা’।মেলা ঘিরে ইদের আনন্দ বইছে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের গোটা তেঘরিয়া অঞ্চলে। জামাইয়েরা এসেছেন তাদের শ্বশুরবাড়িতে। শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে ঘুরছেন মেলা প্রাঙ্গণে। রাতে বাড়ি ফেরার পথে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বড় মাছ, মিষ্টিসহ মুখরোচক খাবার।
বিকেল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলায় থাকছে উপচেপড়া ভিড়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই জামাই মেলা চলবে ৫ দিন অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর এই মেলায় জায়গা পেয়েছে তিন শতাধিক স্টল।চরপাকেরদহ পশ্চিমপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলাম আসাদ বলেন, ‘জামাইকে ডেকে নিয়ে এসে আমরা টাকা দেব। জামাই বড় বড় মাছ কিনে নিয়ে গিয়ে শাশুড়িকে দেবে। শাশুড়ি অনেক আপ্যায়ন করবে। এটাই হলো মেলার মূল উদ্দেশ্য।’তেঘরিয়া এলাকার জামাই আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার শ্বশুর টাকা দিয়েছে ১০ হাজার। আমার শাশুড়ি লুকায়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো দিয়েছে। মেলায় আসছি বউকে নিয়ে। বড় দেখে একটা মাছ কিনব। মুখরোচক কিছু খাবার নিয়েছি, মিষ্টিজাতীয় খাবার নিয়েছি। আমার শাশুড়ির জন্য পান–সুপারি নিয়েছি। এখন আমরা যাওয়ার পথে যা ভালো খাবার পাব তাই নিয়ে বাড়ি ফিরব।’মো. সুরুজ মিয়া নামে একজন জামাই বলেন, ‘আমাকে শ্বশুর পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে মেলায় কেনাকাটা করার জন্য। আমি বড় বড় মাছ নিয়ে যাব। মিষ্টি নিয়ে যাব। তার বাড়িতে উৎসব করে খাবে। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
মো. রনি নামে তেঘরিয়া এলাকার একজন নতুন জামাই বলেন, ‘এই এলাকার জামাই হয়েছি। দুই বছর ধরে মেলায় আসছি। বউকে নিয়ে এসেছি। শালা-শালিকে নিয়ে এসেছি। মাছ কিনছি। এছাড়া আরও অনেক কিছু কিনছি।’
মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের নামি–দামি মাছ। এছাড়াও পাতা মিষ্টি, বালিশ মিষ্টি। সার্কাস, দোলনা, নাগরদোলা, কাপড়-কসমেটিকের দোকান নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। মেলায় লাভের আশা করছে ব্যবসায়ীরা।
মেলায় দোকান নেওয়া মাছ ব্যবসায়ী মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘সাগরের বাম মাছ ১২০০ টাকা কেজি। বিশাল বিশাল সাগরের চিংড়ি আছে। এগুলো ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি। কুড়াল মাছ আছে– ১৫ থেকে ১৬ কেজি ওজনের। এসব ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটামুটি কাস্টমার দেখে আমরা সন্তুষ্ট। দোয়া করবেন যাতে ভালোভাবে বেচাকেনা করে যাইতে পারি।’
মেলার মিষ্টি ব্যবসায়ী মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘এখানে মাছ মিষ্টি ৮০০ টাকা কেজি, পাতা মিষ্টি ৬০০ টাকা কেজি, জাম মিষ্টি ৪০০ টাকা কেজি, ছোট মিষ্টি ৩০০ টাকা কেজি। বালিশ মিষ্টি ৪০০ টাকা, বড় বালিশ মিষ্টি ৬০০ টাকা কেজি। জামাইরা আসতাছে। ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে।’
কসমেটিক ব্যবসায়ী আলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হইতাছে। দোকান অনেক, বেচাকেনা ভালো। লোকজনও অনেক।’
মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। এমন মেলা প্রতি বছরই আয়োজন করার দাবি তাদের। আর গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মাদারগঞ্জের শ্যামগঞ্জ কালীবাড়ী থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী জুই ইসলাম বলেন, ‘অনেক কিছু শিখলাম। অনেক কিছু দেখলাম। মেলায় অনেক ঘুরলাম, দেখলাম সব জায়গা। অনেক ভালো লাগলো।’
বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থেকে আসা রহমত আলী বলেন, ‘আমি বগুড়া সীমানার কাছ থেকে আসছি। অনেক দূরে আটাত্তুরচর বাড়ি। ওখানে আমার বন্ধু বললো যে এখানে জামাই মেলা লাগে। উনি গতকাল বলছে। আমি বিশ্বাস করি নাই যে এত বড় আকারে মেলা লাগব।’
জামাই মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘আমরা যে সাড়া পাচ্ছি। আশা করি আগামীতে এর চাইতেও বড় পরিসরে জামাই মেলা করব। আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতেই এ ধরনের আয়োজন।’