শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে তা যত্নে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছোট্ট সোনামণিদের বলবো—বইগুলো যত্নে রাখবা। নিয়মিত যত্ন নিবা, যেন দ্রুতই ছিঁড়ে না যায়।’ নতুন বই নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে তো পুরোনো বই দেওয়া হতো। ছেঁড়া, জীর্ণশীর্ণ থাকতো। এখন সবাই নতুন বই পায়। নতুন বইয়ের ব্যাপারটাই আলাদা। নতুন বই খুলবে, ঘ্রাণ নিবে, মলাট লাগাবে, নাম লিখবে; কত কী কাজ!’ শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, তা আমরা করে যাচ্ছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, প্রত্যেকটা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত করেছি। প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে প্রাইমারি স্কুল করে দিয়েছি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও কার্পণ্য করিনি।
এখন আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতেও সরকার সব করেছে।’‘এখানে অনেক শিক্ষক আছেন। আপনারা জানেন আমি সরকারে আসার পর থেকে সবার বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছি। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা খুবই মেধাবী। তাদের ভেতরে থাকা সুপ্ত জ্ঞানটা কাজে লাগাতে চাই আমরা। আমাদের দেশের পরিবেশ, সার্বিক পরিস্থিতি মিলেই উন্নতিটা করতে হবে। সেজন্য আমি বলবো- মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, শিক্ষকের কথা শুনতে হবে, অভিভাবকের কথামতো চলতে হবে।
বইপড়ার পাশাপাশি ছড়ার বই, গল্পের বই পড়তে হবে। পড়াশোনাটা আমাদের সবসময় নিয়মিত অভ্যাস ছিল। এখনো সুযোগ পেলে একটু বই পড়ে ফেলি। সবাইকে পড়াশোনা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এখন তো অনলাইন আছে। একটু খুঁজলেই সব পাওয়া যায়। আমাদের সময় এমনটা ছিল না। আমাদের সবকিছু পড়ে জানতে হতো। এখন আমরাও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় নজর দিচ্ছি। এখন শুধু বই পড়ে নয়, দেখেও শিখবে।’ শিক্ষায় যত অর্থ লাগে সরকার দেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যে কথাটা বলতেন সেটা হলো- শিক্ষার যে খরচ, সেটা হলো বিনিয়োগ। আমিও সেটাই মনে করি। সেজন্য শিক্ষায় যত টাকা লাগে দেবো।
বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তারা কীভাবে শিক্ষা দেয়, কীভাবে শেখায়, কোন কোন কারিকুলামে পড়ানো হয়, সেটা আমরাও শেখাবো। সেইসঙ্গে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। যাতে করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সবাই যে সাধারণ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবে, সেটা নয়। দক্ষ জনশক্তি গড়তে হলে কারিগরি শিক্ষাটাও জরুরি।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ায় সাক্ষরতার হার বেড়েছে। আগে যেখানে সাক্ষরতার হার ৪৬ শতাংশ ছিল। সেটা এখন ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করেছি। আমরা যে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছি, সেটার জন্য শিক্ষা দরকার। শিক্ষিত জাতি ছাড়া দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া যায় না। সেজন্য আমরা শিক্ষাটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ধন-সম্পদ অনেক থাকতে পারে। তবে শিক্ষা এমন একটা জিনিস, যা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে আমরা নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার রূপান্তর ঘটাতে কাজ করছি।
নতুন এ শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। যেহেতু নতুন এজন্য অনেকে হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না। আমরা শিক্ষকদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ প্রশিক্ষণ চলমান থাকবে।’ এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হয়েছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। সোমবার (১ জানুয়ারি) বছরের প্রথম দিনে সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।