সুরা আরাফের একটি আয়াতে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা মানুষের সাথে আচরণের ব্যাপারে নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষভাবে নবিজিকে (সা.) বলা হলেও এ নির্দেশনা সব মুসলমানের জন্যই প্রযোজ্য। আমরা যদি এ তিন নির্দেশনা মেনে মানুষের সাথে আচরণ করতে পারি, তাহলে আমরা উত্তম আদব ও আচরণের অধিকারী হতে পারবো।
আল্লাহ বলেন,
خُذِ الۡعَفۡوَ وَاۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَاَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِیۡنَ وَاِمَّا یَنۡزَغَنَّکَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ اِنَّهٗ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
ক্ষমাশীলতা অবলম্বন কর, সত্য-সঠিক কাজের আদেশ দাও আর মূর্খদের এড়িয়ে চল। আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত কর, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা আরাফ, ১৯৯, ২০০)
এ আয়াত থেকে আমরা মানুষের সাথে আচরণের ব্যাপারে তিনটি নির্দেশনা পাই,
১. ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করা
২. সৎ কাজের আদেশ দেওয়া
৩. মুর্খদের এড়িয়ে চলা
১. ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করা
মানুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করতে হবে। উদার হতে হবে এবং ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিতে হবে। সহজ আচরণ করতে হবে। কেউ মন্দ আচরণ করলে বা জুলুম করলেও বিপরীতে মন্দ আচরণ না করে, প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।মুফাসসিরগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলেছেন যে, আরবিতে ‘আফওয়া’ বলা হয় এমন কাজকে যা সহজে কোনো রকম আয়াস ছাড়াই সম্পন্ন হতে পারে। ‘খুযিল-আফওয়’ অর্থ হলো, মানুষের কাছ থেকে শরিয়তের এমন সহজ রূপ গ্রহণ করুন যা মানুষ অনায়াসে করতে পারে। শরিয়ত পালনে মানুষের কাছে সুউচ্চমান দাবি না করে তারা সহজে যতটুকু করতে পারে তাই গ্রহণ করুন।
এ নির্দেশনা শাসকদের শরঈ বিধান কার্যকর করা অথবা সাধারণ মানুষের স্ত্রী-সন্তানসহ অধিনস্তদের শরিয়ত প্রতিপালনের নির্দেশ দেওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য। মানুষকে ততটুকু শরিয়ত অনুসরণ করতেই বাধ্য করা উচিত যতটুকু সহজভাবে করা যায়। শরিয়ত পালনে সুউচ্চমান রক্ষা করার ব্যাপারে জবরদস্তি করার সুযোগ নেই।
২. সৎ কাজের আদেশ দেওয়া
মানুষের মন্দ আচরণের বদলায় প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দিতে হবে, পাশাপাশি তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দিতে হবে। রূঢ় আচরণ না করে কোমল ভাষায় বোঝাতে হবে। কেউ কেউ হয়তো এভাবে সংশোধিত হবে।
৩. মুর্খদের এড়িয়ে চলা
তৃতীয় নির্দেশ হচ্ছে, জাহেল বা মূর্খদের এড়িয়ে চলা। যারা জাহেল ও মুর্খ, যাদেরকে উপদেশ দিয়েও লাভ হয় না, তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা।মন্দ আচরণের প্রতিশোধ না নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার এবং কোমলতার সাথে উপদেশ দেওয়ার পরও কোনো মূর্খ যদি মন্দ আচরণ করে যেতেই থাকে, তাহলে তার সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। নিজের আচরণ খারাপ না করে এ ধরনের মানুষদের এড়িয়ে যেতে হবে। অযথা তর্ক করারও দরকার নেই।