শোলাকিয়ায় এবারও হচ্ছে না ঈদুল ফিতরের জামাত

দেশ জুড়ে ধর্ম বাংলাদেশ ময়মনসিংহ

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এবারও দেশের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সোমবার (১০ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঈদ উদযাপন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।

তিনি জানান, গতকাল শোলাকিয়া ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভা হয়। সেখানে সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। সে অনুযায়ী খোলা জায়গায় ঈদের বড় জামাত আয়োজনের সুযোগ নেই। তাই শোলাকিয়াতে এবারও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।

গত বছরও করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ ঈদগাহ ময়দানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ঈদের জামাত আদায় করেন। একসময় এ ঈদগাহ ময়দানটি দেশ এমনকি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের খ্যাতি অর্জন করে।

ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক প্রতিবেশী নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসুল্লি হতাহতের নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে।

দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করা যাবে না। মসজিদে পড়তে হবে ঈদের নামাজ। একই সঙ্গে জামাত শেষে কোলাকুলি ও পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করা প্রবীণ নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ আদায় করে আসছি। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়তে শোলাকিয়ায় আসতেন। কিন্তু গতবারও শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াত হয়নি, এবারও হবে না। তাই মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে স্বাগত জানাই। বেঁচে থাকলে ঈদের জামাত আরও পড়তে পারব।

কিশোরগঞ্জের পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গতবারের মতো এবারও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। তাই শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ ও শহীদি মসজিদসহ স্থানীয় মসজিদগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল ফিতরের একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, গতকাল শোলাকিয়া ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভা হয়। সেখানে সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। সে অনুযায়ী খোলা জায়গায় ঈদের বড় জামাত আয়োজনের সুযোগ নেই। তাই শোলাকিয়াতে এবারও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।

ঈদের জামাত স্থানীয় মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক জামাত আয়োজন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আমাদের অন্য কর্মকর্তারা মিলে সুন্দর একটি সময়সূচি তৈরি করেছেন, যাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা স্থানীয়ভাবে ঈদের জামাত আদায় করতে পারেন।

গত ২৬ এপ্রিল সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয় দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় না করার জন্য এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায়ে ১২টি শর্ত দেওয়া হয়।

ইসলামের ঐশি বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া ‘সাহেব বাড়ীর’ পূর্ব পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ তার নিজস্ব তালুকে নরসুন্দা নদীর তীরে ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ৭ একর জমির ওপর ‘শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার ইমামতিতে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের সেই জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (যিনি মসনদ-ই-আলা ঈশাখার ষষ্ঠ বংশধর), ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহ ওয়াকফ করেন। এই মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে এবং প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।