আসিফের গিটার ভেঙে ফেলেছেন নোবেল!

বাংলাদেশ বিনোদন

বর্তমান সময়ের সমালোচিত সংগীতশিল্পী মাঈনুল ইসলাম নোবেল। ছোট থেকেই জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবরের ভক্ত সে। আসিফের একাধিক জনপ্রিয় গানও কভার করেছেন তিনি। এক সময় দেশের জনপ্রিয় এই গায়কের সান্নিধ্য পাওয়ায় তার অত্যন্ত যত্নে রাখা প্রিয় একটি গিটার বাজানোর সুযোগ পান নোবেল। কিন্তু আসিফের সেই গিটার ভেঙে ফেলেছেন নোবেল এবং তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও নেই তার।

সোমবার (১৭ মে) ফেসবুকে পোস্ট করে বিষয়টি জানিয়েছেন ঘটনার সাক্ষী ও আসিফের খুব কাছের মানুষ সাংবাদিক নবীন হোসেন।

আমার সংবাদের পাঠকদের জন্য নবীন হোসেনের সেই পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

একটি ভাঙ্গা গিটার। এখন এটার কি মূল্য আছে? আবার কোন মূল্যই যদি না থাকে তাহলে দেশের অন্যতম সেরা একজন গায়কের মন গিটারটার জন্য কেন ভাঙবে?

এবার একটু ভেঙ্গেই বলি। গিটারটাতে স্পর্শ রয়েছে (পড়ুন বাজিয়েছেন ) লাকী আখ্ন্দ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, মানাম আহমেদ, পিন্টু দা, শওকত আলী ইমন, এস আই টুটুলসহ অনেক রথি মহারথি। এই গিটারেই সুর উঠেছে অনেক জনপ্রিয় গানের। গিটারটির মালিক আসিফ আকবর। গিটারটি ভেঙেছে সময়ের বিতর্কিত গায়ক নোবেল।

কাহিনীর বণর্নায় লেখাটা একটু বড় হলেও পুরো ঘটনা পড়তে মনে হয় খারাপ লাগবে না। কারণ কাহিনীর সাক্ষীরা মিডিয়ার বেশ চৌকস কর্মী।

ফোনে আসিফের অবস্থান জানতে চায় নোবেল। আসিফ তখন পরিবার নিয়ে বাইরে। এটা জানার পর নোবেল আসিফের গিটারটা চায়। আসিফ তাকে অফিসে গিয়ে নিয়ে যেতে বলে। পারিবারিক কাজ শেষে আসিফ যখন অফিসে আসে তখনও নোবেল আসেনি। আসিফ তার অফিস ম্যানেজার মেহেদীকে আমার সামনে বলে-নোবেল আসলে গিটার দিয়ে দিও, এখন ওর সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে না।

এরমাঝে আসিফের অফিসে দফায় দফায় চলে এসেছে- কিশোর দাশ, ফেরারী ফরহাদ, নির্মল সরকার, আলতাফ সিদ্দিকীসহ অনেকে। আছেন হালের মিউজিক মুঘল হিসেবে পরিচিত একজন প্রযোজক ও গায়ক।

সিসি ক্যামেরায় দেখা গেলো নোবেল ঢুকল। মেহেদী নোবেলকে গিটার দিয়ে চলে যেতে বলল। নোবেল মেহেদীকে উপেক্ষা করে ড্রয়িং রুমে বসল। ভেতর থেকে গিটার বাজানোর শব্দও শোনা যাচ্ছিল।

পাছে হুট করে নোবেল আবার রুমে ঢুকে না যায় সে কারণে আসিফ তার বাথরুমে ঢুকে গেলো (আদতে বাথরুমে লুকানোর জন্য ঢুকল)। মিউজিক মুঘল (সংগীতাঙ্গনের অতি নিরিহ ও অন্যতম সেরা ভদ্রলোক বলে নাম বললাম না) রুমের দরজা হাত দিয়ে চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে। সে কি দৃশ্য!

এভাবে কেটে গেলো মিনিট কুড়ি । আমার দায়িত্ব পড়ল নোবেলকে চলে যাওয়ার রাস্তা সুগম করার। আমাকে দেখেই নোবেল বললো-ভাইয়া দেখেন মেহেদীর কত বড় সাহস আমাকে চলে যেতে বলে। আমি আমার বাপের অফিসে এসেছি। একটু বসতে পারবো না? আমি মেহেদীকে দিয়ে সরি বলালাম।

ইন্টারকাট শট। আসিফ বাথরুমে লুকানো, মিউজিক মুঘল গেট ধরে উপুড় হয়ে দাঁড়ানো। আরও মিনিট বিশেক পর নোবেল চলে গেলো।

ঐ রাতে কেবল হাসাহাসিই হয়েছে। কারণ আসিফ কারও জন্য বাথরুমে লুকাবে আর মিউজিক মুঘল দরজা চেপে দাড়িয়ে থাকবে-এমন ঘটনা সত্যিই লেখার খোরাক।

রাত ১১টার কাছাকাছি হবে। আসিফের অফিসে যথারীতি ১০/১২ জন আগন্তুক। হুট করেই রুমে ঢুকল নোবেল। তার হাতে দুভাগ হয়ে থাকা গিটার। সোফায় ভাঙা গিটারটা রেখেই আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘বস। গিটারটা ভেঙে গেছে। সরি। আমি যাই।’

সব মিলিয়ে ৪০ সেকেন্ডও থাকেনি নোবেল। ভাঙা গিটার দেখে আমাদের হতভম্ব ভাব কাটার আগেই নোবেল পগার পার। আসিফের অফিস ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ। এক পলকে গায়ক তাকিয়ে আছে তার যুগ ধরে আগলে রাখা গিটারের দিকে।

পাশ থেকে কে যেন ধীর লয়ে বলল, ‘একজন শিল্পীর জন্য সংগীতানুসঙ্গ হলো পরম শ্রদ্ধার। সেটা ভাঙার পরও কোন অনুশোচনা যার মধ্যে নেই, তার কাছে কিছু আশা করাই বোকামি।’