ময়লার বিল আনতে গিয়ে বৃদ্ধার মাথা ফাটালেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

ঢাকা দেশ জুড়ে রাজনীতি

ময়লার বিল নিতে গিয়ে একজন বৃদ্ধার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন কলাবাগান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। ঢাকার শুক্রাবাদ এলাকায় আজ দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

দরজায় লাথি মারেন, তা লেগে মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

ভুক্তভোগী রহিমা বেগম (৭৩) বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায়ও ভুগছিলেন। পরে ফার্মেসিতে গিয়ে ব্যান্ডেজ নিয়েছেন তিনি। আবু সিদ্দিকী রুবেল কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে শুক্রাবাদ এলাকার ‘ময়লা-বাণিজ্য’ তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।

 

রহিমার সন্তান মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাশের বাসায় ময়লার টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সেখানে তর্কাতর্কি হয়েছে। আমাদের বাসার কলবেলও চেপেছিলেন রুবেল। মা দরজা খুলছিলেন। খুলে যাওয়া দরজায় লাথি দেন রুবেল। দরজা মায়ের কপালে লাগে। এতে কপাল ফেটে অনেক রক্ত ঝরেছে।’

 

এ ঘটনার ঘটনাস্থলে এসে ভুক্তভোগীকে মামলা করার জন্য থানায় যেতে বলেছে পুলিশ। মো. আলাউদ্দিন মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

মূলত ঘটনাটা বৃদ্ধা রহিমা বেগমের পাশের ফ্ল্যাটে সুমন চন্দ্র দাসের ময়লার বিল দেওয়া নিয়ে। মে মাসের ময়লার বিল ১০০ টাকা ও নৈশপ্রহরীর বিল ১০০ টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর।

সুমন চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকালও (মঙ্গলবার) ময়লার বিল নিতে এসেছিলেন দুজন। আমার কাছে গতকাল টাকা না থাকায় আজ আসতে বলেছিলাম। তাঁরা সাধারণত ময়লার বিলের জন্য একদিন আসেন। পরদিন আর আসেন না। আমি রসিদে দেওয়া তিনটি মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিয়েছি। এর মধ্যে একটিতে কল যায়, আর রিসিভও করেন। তখন বিল নিতে আসতে বললাম।’

 

তখন সেই দুজন সুমন চন্দ্র দাসের নম্বর রুবেলকে দেন। এরপর রুবেল ফোন করেন।
সুমন বলেন, ‘রুবেল ফোন করে আমাকে বলেছেন অন্য আরেকটা নম্বরে কল দিতে। আমি বললাম, ওই নম্বর আগে বন্ধ পেয়েছি। তখনো রুবেল তাঁর পরিচয় দেননি। এরপর তিনি গালিগালাজ করেছেন। তখন রুবেল বলেন, “তুই জানিস আমি কে? আমি তোর বাসায় আসছি।”’

 

কিছুক্ষণ পর নিচে এসে সুমনকে ফোন দেন রুবেল। তখন চারতলার বাসা থেকে নেমে আসেন বলে জানান সুমন।

সুমন দাস বলেন, ‘(সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রুবেল) অন্যজনকে ফোন দিয়ে বলেছেন, আমি নাকি তাঁকে গালি দিয়েছি। তাঁকে মদ্যপ মনে হওয়ায় আমি বাসার দরজার সামনের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দিই। তালা লাগিয়ে ঘরের ভেতর থেকে কথা বলছিলাম। তখন তিনি পাশের বাসার দরজায় কলবেল চাপছিলেন। সে বাসায় আবার কলাপসিবল গেট ছিল না। এরপর দরজায় লাথি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেন বৃদ্ধার।’
ঘটনার পরপর পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন আসেন এবং রুবেল ‘ক্ষমা’ চেয়ে চলে যান। এ বিষয়ে জানতে রুবেলের মুঠোফোনে কয়েকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

কলাবাগান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (রুবেল) আমার সঙ্গেই কাজ করেন। আমার ফার্মই ময়লা সরানোর টেন্ডার পেয়েছে। তিনি (রুবেল) বেকার তো, সে জন্য তাঁকে শুক্রাবাদের ময়লার দায়িত্ব নিতে বলেছিলাম। ঘটনার পর তিনি মাফ চেয়ে এসেছেন।’

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘(ঘটনাটা) মাত্র শুনলাম আপনার কাছ থেকে। সিটি করপোরেশন টেন্ডার ছাত্রলীগ–যুবলীগদের দিয়েছে। এ ঘটনার দায়দায়িত্ব তাদেরই।’

ঘটনার পর সেখানে গিয়েছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বাসার ময়লার বিল নিতে অন্য বাসায় গিয়েছিলেন। ময়লা নিতে গিয়ে দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। আমি তাঁদের (ভুক্তভোগী) থানায় আসতে বলেছি।’

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুনশি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি এখনো শুনিনি। শুনলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
রাজধানীতে বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে অর্থ লুটপাটের বিশেষ চক্র। রাজধানীবাসীকে জিম্মি করে বছরে অন্তত ৪৫০ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন। তাঁদের ওপর দুই সিটি করপোরেশনের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই।

 

রাজধানীতে প্রতিটি বাসা বা ফ্ল্যাটের জন্য সিটি করপোরেশন–নির্ধারিত মাসিক ৩০ টাকার অনেক গুণ বেশি আদায় করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রসিদ দেন না। সংগ্রহ করা টাকার কোনো অংশ সিটি করপোরেশন পায় না। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় জোর খাটিয়ে ময়লা সংগ্রহের কাজ এবং এলাকা দখলের মতো ঘটনাও ঘটছে।