সুস্থ থাকতে নাভির যত্ন নেবেন যেভাবে

শিক্ষা স্বাস্থ

হাজার বছরের পুরোনো ভারতীয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে নাভির যত্নকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদিক মতে নাভি হল সৃষ্টি এবং কর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। সারা বছর নিয়মিত নাভির যত্ন নিলে রেহাই পেতে পারেন ত্বকের নানা সমস্যা থেকে? কেননা ত্বকের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে নাভির। নাভি আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ! নাভির যত্ন নিলে শরীরের অধিকাংশ রোগকেই দূরে রাখা যায়। নাভির যত্নই আপনি সুস্থ থাকবেন।

 

বিভিন্ন ঋতুতে নাভিতে তেল মালিশ না করার কারণে নানারকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শরীরের নাভিতে তেল ব্যবহারে আপনিও পেতে পারেন কিছু ভালো দিক। শরীরের অন্যান্য অংশের দিকে খেয়াল রাখলেও, এই অংশটির প্রতি আমরা একেবারেই খেয়াল রাখি না, এমনকি নাভির আলাদা করে কোন যত্নও আমরা নিই না। নিজের ত্বক, শরীরের যত্ন নেওয়া শুরু করতে চাইলে নাভির যত্ন নেওয়া থেকেই আপনি সেটা শুরু করতে পারেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক নাভিতে তেল ব্যবহারের সুফল কিছু দিক।

 

নাভির মধ্যে ময়লা জমা হলে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বেশ কিছুজনের নাভিতে প্রচুর ময়লা জমে খুবই বাজে অবস্থা হয়। এই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য তেল মাখুন নাভিতে। তেল মরা চামড়া এবং ময়লাকে সহজে উঠে আসতে সাহায্য করে। যেহেতু নাভি খুব একটা পরিষ্কার করা হয় না, নাভির ময়লা খুব শক্ত হয়ে আটকে থাকে। সেক্ষেত্রে খুব বেশি জোরাজুরি করলে নাভিতে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খুব সাবধানের সাথে এই কাজটি করতে হবে।

 

যেহেতু নাভি খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায় এবং সচরাচর নাভি পরিষ্কার করা হয়ে ওঠে না, কিন্তু নাভিতে জমে থাকা ময়লা থেকে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। এছাড়া নাভি অনেক বেশি সময় ধরে আর্দ্র থাকলেও নাভিতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে, সঠিক তেল ব্যবহার করলে নাভির ইনফেকশন দ্রুত সেরে যায়। ব্যবহার করতে পারেন টি ট্রি অয়েল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান।

পেটে ব্যথার জন্যে নাভিতে তেল দেওয়া খুবই কার্যকরি একটি উপশম। বিশেষ করে হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং এর মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে নাভিতে তেল দেওয়া খুব জরুরি। এতে উপকার মিলবে।

মেয়েদের প্রতি মাসে পিরিয়ডের সময় প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে এই পেটে ব্যথা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব নাভি এবং পেটে তেল ব্যবহার করার মাধ্যমে। পুদিনা পাতা অথবা আদা থেকে তৈরি তেল সবচেয়ে বেশি ভালো কাজে দিয়ে থাকে। কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে পেটে খুব নমনীয়ভাবে ম্যাসাজ করলে কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে ব্যথা অনেকটা কমেছে।
সৌন্দর্য চর্চায়, বিশেষত চুলের জন্য নারিকেল তেলের প্রয়োগের কথা তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। তবে এর একটা আলাদা উপকারিতাও আছে। নাভিতে নারকেল তেল দিলে ফার্টিলিটি বা প্রজনন শক্তি উন্নত হয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

 

নিয়মিত ভাবে নাভিতে তেল ব্যবহারের ফলে শরীর অনেক চনমনে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে স্পার্ম ভালো থাকে, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা কমিয়ে আনে এবং শরীরে হরমোনের প্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল নাভিতে দিয়ে ও পেটে হালকা করে মালিশ করলে, আপনার গায়ের ত্বক নমনীয় হবে।

নাভিতে নিয়মিত তেল লাগালে সন্তানধারণে খুবই উপকার হয়। সন্তানধারণের সঙ্গে নাভির ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ জন্ম অবধি সন্তান তার মায়ের সঙ্গে নাড়ির দ্বারাই যুক্ত থাকে, যা নাভির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে শুধুমাত্র নারী নয়, পুরুষদেরও সুস্থ থাকতে একইরকম ভাবে নাভিতে তেল ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে দামিয়ানা, ১০টি পেয়েরা পাতা, ১১টি জুনিপার মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

 

নিয়মিত নাভিতে নিম তেল দিলে ব্রণ ও ফুসকুড়ির হাত থেকেমুক্তি মিলতে পারে। ব্রণ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কোনও কোনও ক্রিম বা লোশনে আপাতভাবে ব্রণ দূর হলেও, ফের তা হাজির হয়। অথচ নাভিতে নিম তেল দিলে অনায়াসেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।

নাভিকে সুস্থ রাখতে চন্দন তেল, গোলাপ তেল ইত্যাদিও ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও এগুলো অন্যান্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করাটাই সবথেকে ভাল।