বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে আসছেন যারা

বাংলাদেশ রাজনীতি

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা। বেশ কয়েকটি পদ শূন্য থাকায় স্থায়ী কমিটি নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও আলোচনা কার্যকর করা যাচ্ছে না। এছাড়া বেশ কয়েকজন সদস্য অসুস্থ থাকায় এবং বিদেশে অবস্থান করায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। সূত্র বলছে করোনা মহামারীর মধ্যেই শূন্য পদগুলো পূর্ণ করার অনুভব করছে নীতিনির্ধারণী ফোরাম। ১৯ সদস্যের এ কমিটির পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে।

 

সূত্র জানায়, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশকিছু পদ শূন্য রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বিএনপিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে না। এনিয়ে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভেদ তৈরি হচ্ছে।

 

বিএনপি সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে কাউন্সিল করে। ওই বছর আগস্টে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। তবে বিএনপিতে স্থায়ী কমিটির পদ রয়েছে ১৯টি। তখন থেকেই দুটি পদ শূন্য রয়েছে। ১৭ সদস্যের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। তারা হলেন- তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
এছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

 

 

 

সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতাসহ পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে তার রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেই ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মামলা জটিলতায় সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন ভারতের শিলংয়ে।

 

 

বিএনপির দায়িত্বশীল এক সূত্র জানায়, অসুস্থ আছেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বয়সের কারণে বৈঠকে নিয়মিত নন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তাঁরা এখন সেভাবে অংশ নিতে পারেন না। তাঁরা হয়তো অবসরে যেতে পারেন।

 

বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (পদাধিকারবলে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পদাধিকারবলে), মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (পদাধিকারবলে), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
দলীয় সূত্র জানায়, এ বাস্তবতায় স্থায়ী কমিটিতে যুক্ত করার মতো সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন- ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং মোহাম্মদ শাহজাহান।

 

 

 

 

 

এছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনও আলোচনায় আছেন।

জানতে চাইলে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিডি২৪লাইভকে বলেন, স্থায়ী কমিটির যে পথ গুলো খালি রয়েছে তা সম্মেলনের মাধ্যমে পূরণ করার একটি উদ্যোগ ছিল। করোনার কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত বলা যায়, তাই করোনার পরবর্তীকালে দল এটা সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে যখন তখন এই পদগুলো পূরণ হবে।

 

তিনি বলেন, যারা পরীক্ষিত নেতৃত্ব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলের সর্বোচ্চ একটা অবস্থান, সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব অংশ গ্রহণ যেন থাকে।

স্থানী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ খালি থাকলে তা পূর্ণ করা হবে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এটা ঠিক নয়। দলের পুনর্গঠন হবে, দলের জন্য যাদের ত্যাগ রয়েছে তারা নিশ্চয় উঠে আসবে। সবাই ধীরে ধীরে নেতৃত্বে আসবে, আর সেই নেতৃত্ব আসতে তো কিছুটা সময় লাগবেই।

 

 

 

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিডি২৪লাইভকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে জানতে দলের মহাসচিবের সাথে কথা বলার জন্য বলেন তিনি।

 

 

 

জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিডি২৪লাইভকে বলেন, অনেক দিন ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশ কিছু পদ খালি রয়েছে। বিএনপির এখন উচিত অতিদ্রুত কাউন্সিল করা। ওহী (লন্ডন থেকে তারেক রহমানের পরামর্শ) তাদের সর্বনাশের দিকে নিচ্ছে। তারা কোনো আন্দোলনে আসছে না, মিটিং মিছিলে আসছে না খালি পদের পেছনে ঘুরছে।

 

 

 

 

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭(খ)(৬) উপধারায় ‘চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিসমূহের শূন্যপদ পূরণ করতে পারবেন।’