আম প্যাকেজিংয়েই জীবিকা

অর্থনীতি দেশ জুড়ে রাজশাহী

আমের জন্য বিখ্যাত হিসেবে এরইমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে নওগাঁ জেলা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ জেলার আম চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জায়গা করে নিয়েছে বিদেশের বাজারেও। প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমেই এসব আম পাঠানো হয়। আমের মৌসুমে এই প্যাকেজিং করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন এক শ্রেণির মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার আংশিক বরেন্দ্র এলাকা। পানি স্বল্পতার কারণে বছরের একটি মাত্র ফসল আমন ধানের ওপর নির্ভর করতে হতো।

কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে ধানের আবাদ ছেড়ে আম চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। যেখানে আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, আশ্বিনা, ঝিনুক, বারী-৪ ও গুটি জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট।

আমকে কেন্দ্র করে পোরশা ও সাপাহারে উপজেলায় প্রায় তিন শতাধিক মৌসুমি আমের আড়ত গড়ে ওঠে। এসব আড়তে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক আম প্যাকেজিংয়ে কাজ করছেন। মৌসুমি কাজ করে তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। এসব শ্রমিকদের অধিকাংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আসা।

আম নিরাপদ রাখতে একটু খরচ বেশি হলেও মানুষ প্লাস্টিক বা ক্যারেটে প্যাকেজিং করে। আবার অনেকে খরচ বাঁচাতে ফলের কাগজের কার্টনে প্যাকেজিং করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আড়তের শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেসার্স নাহিদ ট্রেডার্সে আমরা ১০ জন শ্রমিক কাজ করছি। গত কয়েক বছর থেকে আমের মৌসুমে আড়তে আম প্যাকেজিং করি। এ বছর করোনার হার বেশি হওয়ায় কম পরিমাণ শ্রমিক আসতে পেরেছি।

প্রায় সময় আমাদের করোনা টেস্ট করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। অনেক আড়ত এখনো চালু হয়নি। এরপরও আমাদের আয় মোটামুটি ভালোই হচ্ছে।

সাপাহার উপজেলার অর্জনপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিক্রেতারা আম নিয়ে আসার পর সেটা ওজন করতে হবে। ক্যারেট থেকে নামিয়ে আড়তের মেঝেতে ঢেলে রাখা হয়।

এরপর প্রতিটি ক্যারেটের ভেতরে কাগজের পত্রিকা রেখে নতুন করে পরিমাণ মতো আম সাজিয়ে বস্তা সেলাই করে প্যাকেজিং করতে হবে। প্রতিদিন প্রায় ৭০-১০০টি ক্যারেট করতে পারি।

মজুরি হিসেবে প্রতিটি ক্যারেটে ২০-২৫ টাকা পেয়ে থাকি। এটা মৌসুমি কাজ। বেশ ভালো আয় করতে পারি। অন্য সময় বাগান পরিচর্যা ও কৃষি কাজ করে থাকি।’

সাপাহার উপজেলার মেসার্স নাহিদ ট্রেডার্সের প্রোপাইটর মাহফুজুল হক চৌধুরী বাবু বলেন, ‘সাপাহার উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক আমের আড়ত আছে। তবে করোনা ভাইরাসের

কারণে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছে না। বর্তমানে ৫০-৬০টি আড়ত চালু আছে। প্রতিটি আড়তে ১০-১৫ জন শ্রমিক আছে। যারা আম প্রতিটি ক্যারেটে সাজানো থেকে শুরু করে বস্তায়

প্যাকেজিং করা পর্যন্ত ২০-২৫ টাকা পেয়ে থাকে। প্রতিজন শ্রমিক ৮০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। এটা তাদের মৌসুমি কাজ। প্রায় তিন মাসের মতো আম বেচাকেনা চলবে। এখান থেকে তারা যে আয় করে তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।’

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। যেখানে হেক্টর প্রতি গড়ে ১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে আম উৎপাদনের পরিমাণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।