করোনাকালে ৬ লাখ টাকার গরুর ভুঁড়ি বিক্রি করেন তানজিলা

অর্থনীতি

তানজিলা জামান একজন গৃহিণী। চার বছর বয়সী এক সন্তান ও স্বামী নিয়েই তার সংসার। তিনি অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী। থাকেন রাজধানীর উত্তরায়। ব্যবসা বা চাকরি করার কোনো রকম ইচ্ছা ছিল না তার। কিন্তু গতবছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অবসর সময় কাটানোর জন্য কিছু একটা করার তাগিদ ছিল তার মনে। ভাবতে থাকেন, কী করে তার এ অবসর সময় কাটবে। অনেক ভেবে-চিন্তে ‘রেডি টু কুক গরুর ভুঁড়ি’ নিয়ে কাজ করার কথা ভাবেন।

 

 

তিনি মনে করেন, অনেকে নাক সিটকালেও আবার অনেকের পছন্দের খাবারের তালিকায় আছে গরুর ভুঁড়ি। কিন্তু পরিষ্কার করার ঝামেলায় অনেকের প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও এ খাবার বাদ রাখেন খাবারের তালিকা থেকে। তার জন্যই তানজিলার এ উদ্যোগ।

তিনি ‘দেশি ফুড’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে এ ব্যবসায়ীক উদ্যোগ পরিচালনা করেন। এছাড়াও ই-কমার্স গ্রুপ উইমেন্স অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামে (উই) যুক্ত হন।

তানজিলা জামান বলেন, ‘গতবছরের নভেম্বরের ২ তারিখ থেকে ফেসবুকে পেজ খুলে শুরু করলাম ‘রেডি টু কুক গরুর ভুঁড়ি’র কাজ। এটি অনেকেরই পছন্দের খাবার। আমারও অনেক প্রিয়। কিন্তু গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করা অনেক ঝামেলার। এতে অনেক সময়েরও প্রয়োজন।

তাই অনেকে ঝামেলা মনে করে খাবারটি থেকে দূরে থাকেন। তাই ঝামেলা এড়ানোর জন্যই আমার এ আইটেম নিয়ে কাজ করা।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘রেডি টু কুক গরুর ভুঁড়ি বাজারের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বাজারের ভুঁড়িগুলো চুন, সোডা দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। এতে মান ও স্বাদ নষ্ট হয়। আমি ভুঁড়িগুলো চুন-সোডা ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করি। ফলে এর স্বাদটা ভিন্ন থাকে। এর চাহিদাও অনেক বেশি।’

প্রথমে গরুর ভুঁড়ি নিয়ে কাজ করায় প্রতিবেশীর অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। অনেকেই বলতেন, স্বামীর এতো টাকা-পয়সা থাকতেও ভুঁড়ির ব্যবসা করে কেন? তিনি সেসব কথায় কান না দিয়ে কাজকে ভালোবেসে আপনমনে করে গেছেন।

 

 

তানজিলা বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে নয়। আমি পরিবারকে সাপোর্ট দিতেই এ কাজ করি। এ কাজে আমার পরিবারও আমাকে অনেক সাপোর্ট দেয়। আসলে কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা ঠিক নয়।’

তানজিলা জামান ভুড়ি নিয়ে কাজ করেন ৮ মাস ধরে। এতেই তিনি সাফল্যের দেখা পান। ৮ মাসে তিনি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার ভুঁড়ি অনলাইনে বিক্রি করেন। এত সাড়া পেয়ে অবাক হন তিনি। তার ক্রেতাদের অধিকাংশই উই গ্রুপের। এছাড়াও ফেসবুক ফ্রেন্ড বা আত্মীয়-স্বজন আছে।

 

 

তার বাসার কেয়ারটেকার বা নিজেই উত্তরাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে ভুঁড়ি সংগ্রহ করেন। এরপর রান্না ঘরে প্রক্রিয়াজাত করেন। ভুঁড়ি পরিষ্কারের জন্য দুজন সহকর্মীও আছেন। ভুঁড়ির অর্ডার পাওয়ার পর ক্রেতাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন।

 

একটা ৬ কেজি ওজনের ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে ২-৩ ঘণ্টা লাগে। শুধু গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে কষ্টও বেশি। পরিষ্কার করার পর কেজি হিসাবে ঢাকার মধ্যে ডেলিভারি দেন।

তানজিলা জামান এখন গরুর ভুঁড়ির পাশাপাশি ‘রেডি টু কুক হাঁসের মাংস’ নিয়েও কাজ করছেন। তিনি জানান, এখন ঢাকার ভেতর হোম ডেলিভারি দিলেও তার ইচ্ছা একদিন সারাদেশে এ পণ্য ডেলিভারি দেবেন।