‘দ্যাড় ঘণ্টা রোদে পুইড়া কিছুই কিনতে পারলাম না। আধাবেলা কোনো ইনকাম অইলো না। দু’টাকা বাঁচাতে গিয়া চার টাকার লস!’ মঙ্গলবার দুপুরে মোহাম্মদপুরে টিসিবির পণ্য কিনতে না পেরে এভাবে আক্ষেপ করছিলেন রিকশাচালক মজিদ মিয়া। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারেননি তিনি। লাইনে তার সিরিয়াল আসার আগেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। অবশেষে খালি হাতে ফিরে গেছেন মজিদ।
টিসিবির যে বরাদ্দ তাতে প্রতিদিন একটি গাড়ি থেকে সবোর্চ্চ ২০০ মানুষ তেল কিনতে পারবেন। কিন্তু গাড়ি আসার পরপরই টিসিবির পণ্য নিতে আরও কয়েকশ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাতে পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অধিকাংশ ক্রেতা।
টিসিবির প্রতিটি ডিলারের দৈনিক তেলের বরাদ্দ এক হাজার কেজি। অর্থাৎ ৫ লিটারের ২০০ বোতল। আর ৭০০ কেজি চিনি ও ৪০০ কেজি ডাল। ৫ লিটার তেল আর দুই-তিন কেজি করে ডাল-চিনি বিক্রি করলে ২০০-৩০০ মানুষ কিনতে পারে।
কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষের দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে টিসিবির ট্রাকের সামনে। মঙ্গলবার টিসিবির পণ্য বিক্রির দ্বিতীয় দিন মোহাম্মদপুর, বছিলা, খামারবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। সবখানেই দুপুর নাগাদ পণ্য শেষ হয়েছে। তাতে অনেক মানুষ খালি হাতে ফিরছেন।
করো’না সং’ক্র’মণের সময় ভোক্তাদের কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে আবারও ট্রাকসেল চালু করছে টিসিবি। গত সোমবার থেকে এ ট্রাকসেল শুরু হয়েছে সারা দেশে। আর তাতে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ।
টিসিবির বিক্রি শুরু হওয়ার কথা সকাল ১০টায়। তবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিসিবির ট্রাকের দেখা মেলেনি কিছু জায়গায়। এরপর যেসব এলাকায় ট্রাক এসেছে, সেখানেও ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঘণ্টা পেরোতেই পণ্য বিক্রি শেষ হয়েছে।
যারা দীর্ঘ লাইনের পরেও পণ্য কিনতে পারেননি তাদের ক্ষোভ ছিল প্রচণ্ড। তারা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
মোহাম্মদপুরে কয়েকজন বলেন, এতটুকু বরাদ্দ নিয়ে আসা ঠিক হয় না। আমরা কতো মানুষ। তারা ছোট্ট ট্র্রাকে পণ্য নিয়ে এসে কয়েকজনকে দিয়ে বলে শেষ। তাহলে যারা কষ্ট করছে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পায় না, তাদের অপরাধ কী? তারা কেন পাবে না?
এদিকে খামারবাড়িতে ট্রাক এসেছে সকাল সাড়ে ১১টায়। সে সময় সেখানে তিনশ-চারশ মানুষকে লাইন ধরে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। এরপর সাড়ে ১২টায় তেল শেষ হয়ে যায়। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন লাইনে অপেক্ষারতরা।
সেখানে ডিলার মোস্তাক হোসেন বলেন, টিসিবির গোডাউন থেকে সময় মতো পণ্য সরবরাহ না পাওয়ার কারণে তারা ঠিক সময়ে স্পটে পৌঁছাতে পারেননি। গোডাউনে দীর্ঘলাইন দিয়ে পণ্য নিতে দেরি হয়েছে। এরপর যতটুকু বরাদ্দ তার থেকে চাহিদা কয়েকগুণ। এ কারণে সবাই পণ্য পাচ্ছে না।
এ দফায় দেশজুড়ে টিসিবির সাড়ে ৪০০ ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৮০টি ও চট্টগ্রাম সিটিতে ২০টি ট্রাক রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরেও ট্রাকসেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হবে।
এসব ট্রাকে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা দরে চিনি ও ডাল এবং লিটারপ্রতি ১০০ টাকা দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে পাওয়া যাবে সকল পণ্য।
একজন ব্যক্তি দৈনিক দুই থেকে চার কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। টিসিবির এ কার্যক্রম চলবে চলতি মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত।