প্রথমবার আবাদ করেই সাড়া ফেলেছে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০

বাংলাদেশ

দেশে প্রথমবার আবাদ করেই কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০। তুলনামূলক কম সময় এবং কম খরচে রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার গুণসম্পন্ন এ ধান আবাদ করে বেশি ফলন পাওয়ায় আগামীতে এ ধানের আবাদ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎকৃষ্ট জিংকসমৃদ্ধ এই বঙ্গবন্ধু ধান দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মাঠে পাঁচ বছর ফলন পরীক্ষার পর ২০১৭ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর পর ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক সুপারিশের পর জাত হিসেবে ছাড়করণের আবেদন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ নামে এটি অবমুক্ত করে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বোরো মৌসুমে এই ধানটি চাষ করা হয় বাংলাদেশের ১০০ একর জমিতে। এর মধ্যে বিএডিসির কন্টাক্ট গ্রোয়ার্সের আওতায় দিনাজপুরের বিরলেই আবাদ করা হয় ৫০ একর জমিতে।

৫০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান আবাদকারী দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক মতিউর রহমান জানান, অন্যান্য ধানের তুলনায় এ ধানের ফলন ভালো। পাশাপাশি এ ধানের রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা থাকায় উৎপাদন খরচও কম হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি একর জমিতে এ ধানের ফলন হয়েছে ৮৫ মন, যা অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি। কম সময়ে ভালো ফলন ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ ধান আবাদে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য কৃষকরাও। ইতোমধ্যেই তার কাছে অনেকে বীজ চাইতে আসছেন অনেক কৃষক।

সস্প্রতি বিরলে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান কর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিএডিসি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র দিনাজপুরের যুগ্ম পরিচালক ড. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, শীত সহিষ্ণু, রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা থাকায় বেশি ফলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ধানের উৎপাদন খরচও কম। তা ছাড়া এ ধানে উৎকৃষ্ট জিংকের পরিমাণ বেশি থাকায় বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

বিএডিসি কন্টাক্ট গ্রোয়ার্স দিনাজপুরের পরিচালক কামরুজ্জামান সরকার বলেন, প্রথমবারেই ভালো ফলন পাওয়ায় আগামীতে এ ধানের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হবে কৃষকদের মাঝে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশের অন্যান্য ধান আবাদ করতে সময় লাগে ১৫৫ থেকে ১৬০ দিন। সেখানে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান আবাদ করতে সময় লাগছে মাত্র ১৪৫ থেকে ১৪৮ দিন। তা ছাড়া অন্যান্য ধানের চেয়ে এর ফলনও ভালো।