পদ্মা সেতুর ওপরতলা দিয়ে চলবে গাড়ি আর নিচ দিয়ে ট্রেন

দেশ জুড়ে

আগামী ২৫ জুন খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো নতুন এক দৃশ্যেরও অবতারণা হবে।

আর সেটি হলো একই সেতুর ওপরতলা দিয়ে চলবে গাড়ি আর নিচ দিয়ে ট্রেন। সে অর্থে পদ্মাসেতু হচ্ছে দেশের প্রথম দোতলা সেতু।

দোতলা সেতু বিভিন্ন দেশে দেখা গেলেও বাংলাদেশে এটি প্রথম। উপর এবং নিচে ভিন্ন যানবাহন চলার ক্ষেত্রেও এই সেতু ব্যতিক্রম।

পদ্মা সেতুতে একতলায় চলবে ট্রেন আর দোতলায় বাস-ট্রাক আর ব্যক্তিগত গাড়ি। এই দ্বৈত ব্যবস্থা এই সেতুকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, পদ্মা সেতুতে রেলপথ কেন সেতুর নিচের তলায় আর গাড়ির রাস্তা কেন ওপরে? উল্টোটাও তো হতে পারত?

সেতু নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, রেললাইন সেতুর নিচে হলে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। মূল সুবিধা হলো নিচে রেল সেতু হলে নির্মাণের ব্যয় কমানো সম্ভব হয়।

ফরিদপুরের বাসিন্দা আমিনুর রহমান। তিনি সম্প্রতি পদ্মা সেতু দেখতে এসে বলেন, ‘দোতলা সেতু জীবনে প্রথম দেখলাম। এত বড় সেতু, ভাবতেই তাজ্জব লাগে। সেতুর নিচতলা দিয়ে যাবে ট্রেন। আর ওপরতলা দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। বাংলাদেশের জন্য এ এক বিরাট ঘটনা।’

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মূল সেতু ছাড়াও ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। এই সেতুটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সড়ক সংযোগ তৈরি হবে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু।

পৃথিবীর বৃহত্তম সড়ক সেতুগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতুর অবস্থান ২৫তম বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে নদীর ওপর নির্মিত সব সেতুর মধ্যে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে পদ্মা সেতুর অবস্থান প্রথম। সেতুর ফাউন্ডেশনের গভীরতার দিক থেকেও এর অবস্থান প্রথম।

পদ্মা সেতু নিয়ে আর কিছু তথ্য:
পদ্মা সেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটো করে এবং একটি ব্রেকডাউন লেন। অর্থাৎ মোট ছয় লেনের ব্রিজ হচ্ছে, যদিও একে বলা হচ্ছে ফোর লেনের ব্রিজ।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার। দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।