ব্রাজিলের একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সর্বশেষ জীবিত সদস্য, যিনি ‘দ্য ম্যান অব হোল’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন, মারা গেছেন। ব্রাজিল সরকারের সংস্থা ‘ফুনাই’ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর কোনো মানুষের সাথে পৃথিবীর কোনো মানুষের কখনও কোনো ধরনের যোগাযোগই হয়নি।
অলাভজনক সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের মতে, রন্ডোনিয়া প্রদেশের ব্রাজিলিয়ান আমাজনের গভীরে তানারু আদিবাসী ভূমিতে গত ২৬ বছর ধরে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন এই ‘ম্যান অব দ্য হোল’। তার এই নামের কারণ, তিনি বন্যপ্রাণী শিকারের জন্য এক বিশেষ কায়দায় গর্ত খুঁড়ে রাখতেন।
যোগাযোগের সমস্ত প্রচেষ্টা তিনি সবসময় প্রতিহত করে গেছেন। তারপরও কর্তৃপক্ষ তাক দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতেন এবং তার দরকার হতে পারে এমন জিনিস, যেমন- দেয়াশলাই, কুঠার, খাদ্যশস্যের বীজ রেখে আসা হতো।
সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তার গোত্রের বাকি মানুষেরা ১৯৭০-এর দশক থেকে কয়েক দফা আক্রমণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রধানত গবাদি পশুপালক এবং ভূমি দখলকারীরা এসব হামলা চালান। সংস্থাটির গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ফিওনা ওয়াটসন বলছেন, এই ব্যক্তির নাম কেউ জানতেন না, এমনকি তার গোত্র সম্পর্কেও খুব বেশি কিছু জানা নেই কারও। এখন তার মৃত্যুর সাথে তার গোত্রের ওপর চালানো গণহত্যা সম্পূর্ণ হলো।
‘এটি আসলেও গণহত্যা। কারণ জমি এবং সম্পদের জন্য ক্ষুধার্ত মানুষরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি সম্পূর্ণ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিল।’
২৩ আগস্ট ফুনাইয়ের কর্মকর্তারা একটি কুঁড়েঘরে ওই ব্যক্তির মৃতদেহটি একটি ঝুপড়ির মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। হামলা বা অন্য কারও উপস্থিতির কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।
ফুনাই বলছে, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তবে ফেডারেল পুলিশ তার মরদেহের ফরেনসিক পরীক্ষা করবে।
২০১৮ সালে ফুনাই ‘ম্যান অব দ্য হোলের’ সর্বশেষ ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল, যেখানে তাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় হাতে কুঠার নিয়ে গাছ কাটতে দেখা যায়।
সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তার জীবনযাত্রার কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি ভুট্টা এবং পেঁপেসহ কিছু শস্য রোপণ করেছিলেন এবং খড়, কাঠ ও গাছের পাতা দিয়ে ঘর তৈরি করেছিলেন।
ব্রাজিলে ৩০৫টিরও বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে যাদের সম্পর্কে মূলধারার সমাজ জানে। তারা ২৭৪টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। অন্যদিকে বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং যোগাযোগহীন উপজাতির সংখ্যা ৫০ এরও বেশি।
সারা পৃথিবীতে এমন শতাধিক জনগোষ্ঠী আছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বাস করে আমাজন এলাকায়। এদের সাথে মূলধারার সমাজের সম্পর্ক ‘শান্তিপূর্ণ’ নয়। তাদের জনসংখ্যা কত, তারা কী ভাষায় কথা বলে তার সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।