ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথে নিয়ে যাওয়ার পথে ডাকাতির কবলে পড়ে সোয়া ১১ কোটি টাকা। ডাকাতির পর এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮ জনকে। এ ঘটনার পর সামনে আসে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নাম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগেও কোনাবাড়ি এলাকায় ২০১৬ সালে কোম্পানিটি বুথে টাকা দিতে গেলে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। যদিও ইন্স্যুরেন্স করা থাকায় ফেরত পাওয়া যায় সে টাকা। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত সেবা দিচ্ছে ৭টি ব্যাংককে। এ কাজের জন্য তাদের গানম্যান রয়েছে মাত্র তিনজন।
ডিবি বলছে, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড বিভিন্ন ব্যাংকের বুথে টাকা লেনদেন করতো কোনো সিকিউরিটি এবং অস্ত্র ছাড়াই। এই বিষয়টি ছিনতাইকারীরা দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি করে। প্রতিদিন তাদের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি বুথে টাকা লেনদেনের জন্য বের হয়।
কোম্পানিটির দুই থেকে তিনজন গানম্যান রয়েছে। তবে তারা গাড়ির সঙ্গে যায় না। শুধু অফিসে অস্ত্রসহ বসে থাকে। টাকা লেনদেনের অধিকাংশ সময় তারা থানাকে অবহিত করে না। এমনকি বড় অঙ্কের টাকা বহন করার সময়ও তারা নিকস্থ থানায় অবহিত করতো না।
জানতে চাইলে মানি প্ল্যান্ট লিংকের ডিরেক্টর অপারেশনস আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে তারা বিভিন্ন ব্যাংকে সেবা দিয়ে আসছেন। ২০১৬ সালে বুথে টাকা দিতে গেলে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। ইন্স্যুরেন্স করা থাকায় ফেরত পাওয়া যায় সে টাকা।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কমিউনিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন রয়েছে।
ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম গোয়েন্দা-উত্তর বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী জাগো নিউজকে বলেন, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড সেদিন আদৌও সোয়া ১১ কোটি টাকা নিয়ে বুথে যাচ্ছিল কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া তারা যে সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করছে তাদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছিল কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। আরও পড়ুন: ১১ কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া গাড়ি কেন নির্জন রাস্তায়
গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, মানি প্ল্যান্ট লিংকের প্রতিদিন চার-পাঁচটি গাড়ি বুথে টাকা লেনদেনের জন্য বের হয়। কোম্পানিটির দু-তিনজন গানম্যান রয়েছে। তারা গাড়ির সঙ্গে যায় না। শুধু অফিসে অস্ত্রসহ বসে থাকে। মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের অধিকাংশ সময় তারা থানাকে অবহিত করে না।
তিনি বলেন, কোম্পানিটির সিকিউরিটি গার্ডকে থানায় এনেছিলাম। তারা এসব স্বীকার করেছেন। গাড়িতে যদি গানম্যান থাকতোই, তাহলে কেন গুলি করলো না?
এদিকে ডাকাতির ঘটনায় নতুন করে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। মিরপুর, বনানী, সুনামগঞ্জ ও সিলেটসহ ভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৮ জনকে। আগে উদ্ধার করা ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজারসহ উদ্ধার হওয়া মোট টাকার পরিমাণ ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০।
গ্রেফতাররা হলেন, মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩), মো. আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া(২৮) ও এনামুল হক বাদশা (২৬)।
আরও পড়ুন: গাড়িতে থাকা মানি প্ল্যান্টের ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, উত্তরার তুরাগ এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অভিযান ও টাকা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে হারুন বলেন, প্রথমে রাজধানীর বনানী থেকে সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার হেফাজত থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনানী থেকে গ্রেফতার করা হয় ইমনকে। তার জোয়ার সাহারার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
‘ঢাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেফতারের পর ১ কোটি সাত লাখ টাকাসহ ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। ডিবির অপর একটি দল সিলেটের সুনামগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেফতার করে।’
গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ৮ মার্চ সিলেট যাওয়ার কথা বলে একটি হাইয়েস মাইক্রো ভাড়া করা হয়। ডাকাতদের কথা মতো হাইয়েস গাড়িটির চালক কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গেলে পেছনের সিট ঠিক করার কথা বলে তার পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়। এরপর ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির গাড়ি ফলো করতে ওৎ পেতে থাকে।
আরও পড়ুন: তিন বক্স টাকা উদ্ধার, সিকিউরিটি কোম্পানির দুই পরিচালকসহ আটক ৭ ডিবিপ্রধান বলেন, ডাকাত দল দীর্ঘদিন ধরে মানি প্ল্যান্ট লিংকের টাকা বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করছিল। তারা জানতো টাকা বহন করার ক্ষেত্রে কোম্পানিটির সিকিউরিটি ও অস্ত্র ছিল না।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ডাকাতরা সেখানে দুটি টাকার ট্রাংক ভেঙে দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটা ব্যাগ ভর্তি করে। বাকি দুই ট্রাংকের টাকা দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়। কোনো ব্যাগ না থাকায় এত টাকা দেখে ভয়ে ট্রাংক ফেলে পালিয়ে যায়।
অবশিষ্ট ব্যাগটি হায়েসের ড্রাইভার সুস্থ হয়ে নিজ হেফাজতে নেয়। এছাড়াও সে ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা ভরে তার ভাইয়ের কাছে দেয়। পরবর্তী সময়ে তাদের স্বীকারোক্তি মতে বাসা থেকে ১ কোটি সাত লাখ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানান হারুন অর রশিদ।