ওমর (রা.) তালহা (রা.)–কে ‘সাহেবে ওহুদ’ বলে ডাকতেন

ওমর (রা.) তালহা (রা.)–কে ‘সাহেবে ওহুদ’ বলে ডাকতেন

ধর্ম

হিজরি তৃতীয় সনে মক্কার অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সংঘটিত হয় ওহুদ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে হজরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) এক হাতে তলোয়ার আর অন্য হাতে বর্শা নিয়ে কাফিরদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। যুদ্ধের একপর্যায়ে মুসলিম বাহিনী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তখন অল্প কজন সৈনিক আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ঘিরে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। হজরত তালহা (রা.) তাঁদের অন্যতম।এ যুদ্ধে রাসুল (সা.) আহত হন। তাঁর দাঁত মোবারক শহীদ হয়। সে সময় তালহা (রা.) ছুটে এসে আহত রাসুল (সা.)-কে কাঁধে তুলে নিয়ে পাহাড়ের ওপরে রেখে আবার শত্রুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।

 

ইতিমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আবু বকর (রা.) আর আবু উবাইদা (রা.) রাসুল (সা.)–এর সেবা করতে এলে তিনি তাঁদের বললেন, আমাকে ছেড়ে তোমাদের বন্ধু তালহাকে দেখো।হজরত আবু বকর (রা.) বলেছেন, ‘আমরা তাকিয়ে দেখি, তালহা (রা.) রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গর্তে অজ্ঞান হয়ে আছেন। তাঁর একটি হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্নপ্রায়। সারা শরীরে তির আর বর্শার সত্তরটিরও বেশি আঘাত।’ হজরত আবু বকর (রা.) ওহুদ যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলেই বলতেন, ‘সে দিনের সবটুকুই তালহার!’ওমর (রা.) তালহা (রা.)–কে ‘সাহেবে ওহুদ’ (ওহুদওয়ালা) বলে ডাকতেন। এ যুদ্ধেই হজরত তালহা (রা.)–র অসাধারণ ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে রাসুল (সা.) তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।কায়েস ইবনে আবু হাজেম (রা.) বলেন, ‘আমি দেখেছি, সেদিন আঘাতের কারণে তালহার হাত অবশ ও নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল। তিনি সে হাত দিয়েই নবী (সা.)-কে রক্ষা করেছিলেন। কী যে প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিলেন তালহা (রা.)।’ (বুখারি, হাদিস: ৩,৭৬০)

 

ওহুদ যুদ্ধে তালহা (রা.)–র বীরত্ব ও সাহসের নজিরবিহীন অবদানের জন্য রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘যদি কেউ কোনো শাহাদাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াতে দেখে আনন্দ পেতে চায়, তাহলে সে যেন তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহকে দেখে।’তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) একজন জীবন্ত শহীদের নাম। বদর যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে পারেননি। কারণ, মদিনার মুসলিম জনপদের ওপর আক্রমণ হতে পারে, এ আশঙ্কায় রাসুল (সা.)–এর আদেশে তাঁকে মদিনায় থাকতে হয়েছিল। তবে তাঁকে ‘বদরি সাহাবি’ হিসেবেই গণ্য করা হয়। কেননা, সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।খন্দকের যুদ্ধ, বাইয়াতে রিদওয়ান, খাইবার, মুতাসহ সব অভিযানেই তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ইসলামের সূচনাপর্বে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইসলামের ছায়াতলে আসার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর।
হজরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) পৃথিবীতেই জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া একজন সৌভাগ্যবান সাহাবি।