নবজাতকদেরও ঠোঁট ফাটে। এ বিষয়ে যত্ন না নিলে শিশুকে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। যখন আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ও বাতাস শুষ্ক থাকে, তখন শিশুদের ঠোঁটে আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং শুষ্ক হয়ে যায়। অনেক শিশু নাক বন্ধ ও ঠান্ডা লাগার কারণে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেয়। ফলে তাদের ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায় ও ফাটে।
নবজাতকের শরীরে তরলের ঘাটতি হলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে; যা শুষ্কতার কারণ। ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য, খেলনা, জামাকাপড় বা কম্বলের মাধ্যমে নবজাতকের অ্যালার্জি হতে পারে এবং এর জন্য ঠোঁট শুষ্ক হতে পারে। এ ছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঠোঁট ফাটতে পারে। যখন নবজাতক ক্রমাগত ঠোঁট চুষতে থাকে, তখন লালা মুখ থেকে বাষ্পীভূত হয়; যা ঠোঁট শুষ্ক করে এবং শেষ পর্যন্ত ঠোঁট ফাটতে শুরু করে। আবার দাঁত উঠতে শুরু করলেও শিশুরা ঠোঁট কামড়ায়। এটিও শুষ্কতার কারণ হতে পারে।
জন্মের পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ত্বক খসখসে থাকে। কারণ, এই সময় তাদের ত্বককে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। এই মানিয়ে নিতে গিয়ে ঠোঁট ফাটা, নতুন ত্বক খসে পড়ারই একটা অংশ। তা ছাড়া নবজাতকের ত্বক খুব পাতলা, নরম ও সংবেদনশীল হয়। ঠোঁটে কোনো তৈলাক্ত গ্রন্থি থাকে না। তাই নবজাতকের ঠোঁট সহজেই শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়।শরীর পানিশূন্য কি না, বুঝবেন কীভাবেযদি নবজাতকের ডায়াপার ছয় ঘণ্টা বা এর বেশি সময় শুষ্ক থাকে; অর্থাৎ প্রস্রাব কম করে, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ঠান্ডা হাত ও পা, সামান্য বা অশ্রুহীন কান্না, স্বাভাবিকের চেয়ে কম খেলা করা, মাথার ওপরের নরম অংশ দ্রুত ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসে ওঠানামা করা, শিশুর শুষ্ক ত্বক, ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতা ও বিরক্তিভাব থাকে; তবে বুঝবেন পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন হচ্ছে।ঠোঁট ফাটা কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেও হতে পারে।
যেমন: ভিটামিনের অভাব বা ভিটামিন এ অত্যধিক গ্রহণ। লিপ লিকার ডার্মাটাইটিস নামক একটি অবস্থার লক্ষণও হতে পারে ঠোঁট ফাটা। এই সমস্যায় লালা নিঃসরণের ফলে জ্বালা হয়, অস্বস্তি ও চুলকানির কারণও হতে পারে। নবজাতকেরা এ থেকে স্বস্তি পেতে নিজেদের ঠোঁট চাটে ও ভেজায়। ফলে অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং ঠোঁট ফাটা ও রক্তপাতও হতে পারে।
ঠোঁটের যত্ন
নবজাতকের ঠোঁট ফাটা ঠিক করার ভালো উপায়, ঠোঁটে কয়েক ফোঁটা বুকের দুধ ঢেলে দেওয়া। বিশুদ্ধ সুগন্ধিমুক্ত নারকেল তেলে লরিক অ্যাসিড থাকে; যা বুকের দুধেও পাওয়া যায়।
নারকেল তেল ঠোঁট আর্দ্র রাখতে সহায়তা করতে পারে।
ল্যানোলিন ক্র্যাকড নিপেলসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ফাটা ঠোঁটের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিদিন নবজাতককে পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
শীতকালে নবজাতকের ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা; যাতে বাতাস সহজে শুষ্ক না হয়।
নবজাতকের পোশাক যাতে আবহাওয়া উপযোগী হয়, তা খেয়াল রাখা।
আবহাওয়া ঠান্ডা ও শুষ্ক হলে নারকেল তেল বা বেবি-সেফ লিপগ্লস ব্যবহার করা যায়।
পানিশূন্যতা এড়াতে নবজাতককে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা, চর্ম, যৌন, লেজার ও কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা