রোজায়-বদহজম-হলে-করণীয়

রোজায়-বদহজম-হলে-করণীয়

ধর্ম স্বাস্থ

পবিত্র রোজার মাসে প্রায় সব স্থানেই সাহরি ও ইফতার নিয়ে থাকে নানা ধরনের আয়োজন। থাকে নানা ধরনের খাবার।
আর তাই সারাদিন না খেয়ে থাকার পর ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা বাড়তি কষ্ট দিয়ে থাকে।

আর তাই এ সময় বদহজম, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা এড়াতে সাহরি বা ইফতারে খাবার খেতে হবে কিছু নিয়ম মেনে।
মানবদেহের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয়। এর কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে খাবার পরিপাক করতে সহায়তা করা। পাকস্থলীতে যখন এই অ্যাসিডের ক্ষরণ বেড়ে যায়, তখন পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়।

যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাস্ট্রাইটিস বলে।দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এরপর যদি অতিরিক্ত খাবার ও ভাজা-পোড়া খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে সহজেই গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের সমস্যায় ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে পেটে ব্যথা, বুক জ্বালা-পোড়া, দম বন্ধ হয়ে আসা, ঢেঁকুর ওঠা, বমি বমি ভাব, পেট ফেঁপে থাকা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।আর সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে নানা ধরনের খাবার ও ভাঁজাপোড়া খাওয়ার কারণে এ সময়ে এ ধরনের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

গ্যাস্ট্রিক-বদহজম থেকে বাঁচতে করণীয়
ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার কম খেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন। এছাড়া ইফতারের খাবার দুই ভাগে ভাগ করে খাওয়া ভালো। মাগরিবের নামাজের আগে ও পরে। খেজুর ও পানি বা ফলের জুস দিয়ে ইফতার শুরু করুন। এ সময় পানীয় বেশি পান করুন। এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ার পর ভারী খাবার, যেমন—রুটি, দই-চিড়া, ভাত ইত্যাদি খেতে পারেন।

 

ইফতারে করণীয়

১. ইফতারে তরল জাতীয় খাবার, সহজে হজম হয় এমন খাবার, ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। পাতলা খিচুড়ি, স্যুপ, সাবুদানার আইটেম, সেদ্ধ ভেজিটেবল, চাইনিজ ভেজিটেবল ও মোমো খাওয়া যেতে পারে। রাখতে হবে প্রোটিন জাতীয় খাবারও।

২. ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মিষ্টিজাতীয় কিংবা লবণজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া চর্বি ও ট্র্যান্সফ্যাট জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।

৩. ইফতারে শরবত বা ফলের জুস অবশ্যই খেতে হবে। সেক্ষেত্রে ইসুবগুল বা লেবুর শরবত, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি যেকোনো মৌসুমি ফল খেতে পারেন।

৪. ইফতারে একসাথে বেশি খেয়ে ফেলার অভ্যাস অনেকেরই আছে। কিন্তু এটি পেটের জন্য খুব খারাপ অভ্যাস। প্রয়োজনে ইফতারের পর থেকে কয়েকবার অল্প অল্প করে খাবার খান।

৫. খাওয়ার পর পরই কখনো বিছানায় শুয়ে পড়া উচিত না। একটু হাঁটাহাঁটি করা ভালো, এতে করে খাবার হজম হবে দ্রুত।

সাহরিতে করণীয়

১. সারদিন না খেয়ে থাকতে হবে বলে অনেকেই সেহরিতে পেট ভরে খাবার খেয়ে নেন, যা মোটেও ঠিক নয়। অতিরিক্ত খেলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বেড়ে যাবে।

২. অল্প পরিমাণে ভাত-রুটি, শাক-সবজি, ডিম, দুধ, মাংস ইত্যাদি খাবার সেহরিতে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই তেল-মসলা কম ব্যবহার করে রান্না করবেন।

৩. সাহরির সময় শেষ হওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগেই খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত। এতে কিছুটা সময় নড়াচড়া করতে পারবেন। এতে খাবার হজম হবে। এ সময়ের মধ্যে অল্প অল্প করে কিছুটা পানিও খেতে পারবেন।

৪. যারা দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাবেন।