বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ উপমহাদেশের গ্রামাঞ্চলে শিশু-কিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি ঐতিহ্যবাহী খেলার নাম ‘সাতচাড়া’। খোলা মাঠে শারীরিক কসরতের মাধ্যমে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। অঞ্চলভেদে এই খেলাকে কেউ পিটু, পিট্টু, সাতপাথর, লিংগোড়ি কিংবা লাগোরিও নামেও চেনে।ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ খেলার উল্লেখ পাওয়া যায় ভগবত পুরাণেও। বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ তার বন্ধুদের সঙ্গে এই খেলাটি খেলতেন।
১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এটি ছিল অন্যতম জনপ্রিয় খেলা, যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।কীভাবে খেলা হয় সাতচাড়া? এই খেলায় প্রয়োজন পড়ে সাতটি চাড়া (ইটের পাতলা টুকরা বা পাথর), আর একটি ছোট বল—যেটি সাধারণত রাবার বা কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। খেলাটি সাধারণত দুই দল মিলে খেলে, প্রত্যেক দলে তিন থেকে সাতজন খেলোয়াড় থাকতে পারে। খেলার শুরুতে সাতটি চাড়া একটির ওপর আরেকটি রেখে স্তূপ আকারে রাখা হয়।
একটি দল একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বল ছুড়ে সেই স্তূপ ভেঙে দেয়। তখন প্রতিপক্ষ দল বল হাতে নিয়ে প্রথম দলের খেলোয়াড়দের গায়ে বল ছুঁড়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। প্রথম দলের খেলোয়াড়রা বলের আঘাত এড়িয়ে আবার সাতটি চাড়া আগের অবস্থায় সাজানোর চেষ্টা করে।
যদি কোনো খেলোয়াড় বলের আঘাতে আউট হয়ে যায়, তবে সে দল থেকে বাদ পড়ে। পুরো দল আউট হয়ে গেলে পালা বদলে যায়। তবে যদি তারা বলের আঘাত এড়িয়ে চাড়া পুনরায় সাজাতে পারে, তাহলে তারা পয়েন্ট অর্জন করে। নির্ধারিত সময়ে যে দল বেশি চাড়া সাজাতে পারে, সেই দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
-
খেলার উপকারিতা ও সতর্কতা
শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাতচাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরকে সক্রিয় রাখে, দৌড়ানো, ঝাঁপ দেওয়া ও হঠাৎ দিক পরিবর্তনের কারণে পেশি ও হাড় মজবুত হয়। পাশাপাশি, মনোযোগ, প্রতিক্রিয়া ও দলগত সমন্বয়ের দক্ষতাও বাড়ে।
তবে এই খেলায় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বলের আঘাত যেন চোখ, মুখ বা সংবেদনশীল স্থানে না লাগে, সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হয়। এছাড়া, চলাচলপথ বা যানবাহন এলাকায় এই খেলা না করাই ভালো, কারণ এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
সাতচাড়া কেবল একটি খেলা নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও একটি অংশ, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ফের জনপ্রিয় করে তোলা প্রয়োজন।