রিজেন্ট হানিইটার: বিপন্ন পাখি ‘ভুলছে নিজের গান’

পরিবেশ

বিপন্নপ্রায় এক গায়ক পাখি এতটাই হুমকির মুখে পড়েছে যে এটি এখন নিজ প্রজাতির গান ভুলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এক সময় দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় যে রিজেন্ট হানিইটারের দেখা মিলত বিপুল পরিমাণে সেটি এখন ভয়াবহ বিপন্ন পাখির তালিকায় ঢুকে পড়েছে। পৃথিবীতে এ পাখির সংখ্যা এখন ৩০০র মতো।

“তারা (নিজ প্রজাতির) অন্য হানিইটারদের সঙ্গে মেলামেশা এবং যে ধরনের শব্দে করে গান গাওয়ার কথা তা শেখার সুযোগ পাচ্ছে না,“ বলেছেন ড. রস ক্রেটস।

তার এ গবেষণার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের রয়েল সোসাইটি জার্নাল প্রসিডিংস বি’তে প্রকাশিত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিফিকাল্ট বার্ড রিসার্চ গ্রুপের সদস্য ড. ক্রেটস এখন ধরা পড়া বিপন্ন রিজেন্ট হানিইটারদেরকে বনে থাকা তাদেরই স্বজনদের গান শেখানোর চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে তিনি বন্য হানিইটারদের রেকর্ড করা গান ব্যবহার করছেন।
এই গবেষকরা অবশ্য হানিইটারদের গান নিয়ে গবেষণায় নামেননি, তাদের লক্ষ্য ছিল পাখিগুলোর খোঁজ বের করা।

“তারা এতটাই বিরল এবং এত বিশাল এলাকাজুড়ে থাকতে পারে, সম্ভবত যুক্তরাজ্যের আয়তনের চেয়েও ১০ গুণ বড় জায়গাজুড়ে, যে কারণে আমাদেরকে আসলে খড়ের গাদায় সুই খুঁজতে হয়েছে,” বলেছেন ক্রেটস।

কষ্টসাধ্য এই অনুসন্ধানেই ড. ক্রেটস বিপন্ন এই পাখিগুলো যে ‘অদ্ভুতভাবে গাইছে’ তা খেয়াল করেন।
“তারা রিজেন্ট হানিইটারের মতো শব্দ করছিল না, করছিল অন্য প্রজাতির পাখিগুলোর মতো,” অনুসন্ধানের সময়কার কথা স্মরণ করে বলেন এ গবেষক।
মানুষ যেভাবে কথা বলা শেখে, গায়ক পাখিরাও সেভাবেই গান শেখে।

“ছোট পাখিরা যখন নীড় ছেড়ে বিপুলা পৃথিবীতে বেরিয়ে আসে, তখন তাদের সঙ্গ দরকার হয়, বয়সী পুরুষ পাখিদের সঙ্গ, তারা বয়সী পাখিদের গান বারবার শুনে গান শেখে,” বলেন ক্রেটস।

রিজেন্ট হানিইটাররা এখন তাদের আবাসস্থলের প্রায় ৯০ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে; এখন তারা এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে তরুণ পুরুষ পাখিরা অন্য পুরুষদের সঙ্গ পাচ্ছে না, তাদের কাছ থেকে গান শুনতে পারছে না।

“তাই তারা অন্য প্রজাতিগুলোর গান শিখছে,” বলেন ক্রেটস।

রিজেন্ট হানিইটারের ১২ শতাংশের কাছ থেকে তাদের প্রাকৃতিক গান এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে, জানিয়েছে বিবিসি।