রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্তানের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হ’ত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আ’সামি মানিক র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দু’কযুদ্ধে” নিহ’ত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র্যাব-৪ গ্রে’প্তারে অভিযানে গেলে ‘বন্দু’কযু’দ্ধে’ নিহ’ত হয় মানিক। সে এ মামলার ৫ নম্বর আ’সামি।
র্যাব-৪ এর উপ-অধিনায়ক মেজর রবিউল হক জানান, পল্লবী থানাধীন ইস্টার্ন হাউসিং এলাকায় সন্ত্রা’সীরা অবস্থান করছে- এমন খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল রাত ৩টার দিকে সেখানে অভিযানে যায়। এ সময় সন্ত্রা’সীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাব পাল্টা গুলি ছুঁড়লে
স’ন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে জানা যায় যে, সে সাহিনুদ্দিন হ’ত্যা মামলার আ’সা’মি মানিক। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছে।
পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী সমকালকে বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। মানিকের বিরুদ্ধে পল্লাবী থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। তিন মাস আগে ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় গ্রে’প্তার হয়েছিল মানিক। কিছু দিন আগে সে জামিনে ছাড়া পায়।
গত ১৬ মে বিকেলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে পল্লবী ডি ব্লকে একটি গ্যারেজের ভেতর সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে হ’ত্যা করা হয়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হ’ত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় নিহ’তের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ২০ জনকে আসা’মি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসা’মি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। কুপিয়ে হ’ত্যার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করা হয়। সেটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মামলাটি বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রে’প্তার করা হয়েছে মোট সাতজনকে। এর মধ্যে ঘটনার পরপরই মুরাদ ও দীপককে গ্রে’প্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পরিচালক কমান্ডার আল মঈন জানান, সাহিনুদ্দিনকে হ’ত্যার পরই আউয়ালকে ফোনে হ’ত্যার বিষয়টি সুমন নিশ্চিত করে। তাদের মধ্যে কথা হয় ৩০ সেকেন্ড। ঘটনার ৪-৫ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে বসে সন্ত্রা’সী তাহের ও সুমনসহ আরও কয়েকজন মিলে
সাহিনুদ্দিনকে হ’ত্যার পরিকল্পনা করে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমনকে। ১৬ মে বিকেলে সুমনের নেতৃত্বে ১২-১৪ জন হ’ত্যা’কাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর বাইরেও আরও কয়েকজন যুক্ত ছিল। এর আগের দিন ১৫ মে সুমন ও বাবুসহ কয়েককজন হ’ত্যার ছক করে। হ’ত্যা’কাণ্ডের দুই মাস আগেও সাহিনুদ্দিন ও সুমন গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে পল্লবী থানায়।
র্যাব জানায়, পল্লবীর আলীনগর বুড়িরটেকে আউয়ালের একটি আবাসন প্রজেক্ট রয়েছে। সেখানে সাহিনুদ্দিনদের জমি আছে। ওই জমি আউয়াল দখল করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব। আবাসন প্রকল্প দেখভালের জন্য সন্ত্রা’সী ব্যবহার করতেন তিনি। জমি দেখে রাখার জন্য সুমনকে প্রতিমাসে তিনি ১০-১২ হাজার টাকা দিতেন। হ’ত্যাকাণ্ডের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে আউয়ালের সঙ্গে।
সাহিনুদ্দিন হ’ত্যা মামলায় বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি মাজার থেকে এমপি আউয়ালকে গ্রে’প্তার করে র্যাব-৪। র্যাবের পৃথক দল চাঁদপুর থেকে হাসান ও পটুয়াখালী থেকে জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তা’র করে। এ ছাড়া এই মামলায় বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ও পল্লবী থেকে সুমন ও রকি তালুকদারকে গ্রে’প্তার করে।