জ্ঞানীর মর্যাদা ও প্রজাদের সহযোগিতায় যেমন ছিলেন সুলতান মাহমূদ

ধর্ম

ইতিহাসের পাতায় যুগে যুগে রচিত হয়েছে টুকরো টুকরো জ্ঞানের সুন্দর সুন্দর উপদেশ। এসব উপদেশ যুগের পর যুগ মানুষ মেনে চলবে। এসব জ্ঞান থেকে পাবে চলার অনুপ্রেরণা। ইয়ামিনউদ্দৌলা আবুল কামি মাহমূদ ইবনে সবুক্তগিন ওরফে সূলতান মাহমূদ গজনির জীবনের ২টি ঘটনা হতে পারে মানুষের জন্য সেরা অনুপ্রেরণা-

জ্ঞানের সম্মান ও জ্ঞানীর পৃষ্ঠপোষকতা ইয়ামিনউদ্দৌলা আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে সবুক্তগিন। যিনি সুলতান মাহমূদ নামেই বেশি পরিচিত। তিনি যেমন জ্ঞানের সম্মান দিতেন তেমনি জ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তার দরবারে এমন অনেক ‘নুজুমি’ পণ্ডিত (জ্ঞানী) ছিল, যাদের তুলনা সারা সাম্রাজ্যে ছিল না। কিন্তু সুলতান তাদের কাছে কখনো কিছু জিজ্ঞাসা করতেন না।

একদিন রাজ দরবারের এক দরবারি সুলতান মাহমূদকে জিজ্ঞাসা করল, হুজুরের দরবারে এত নুজুমি পণ্ডিতের (জ্ঞানী) অবস্থান কিন্তু হুজুর কখনো তাদের কাছে কিছু জানতে চান না। তাহলে এদের থাকায় লাভ কী?

এবার জ্ঞানের সম্মান ও জ্ঞানীর পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী সুলতান বললেন, ‘এদেরকে শুধু এজন্য রাখা হয়েছে যে, দেশে সব বিষয়েরই পণ্ডিত (জ্ঞানী ব্যক্তি) থাকা খুবই দরকার। যেন কখনো প্রয়োজন হলে অসুবিধায় পড়তে না হয়।

তবে তাদের কাছে কোনো কিছু জানতে না চাওয়ার কারণ হলো; আমার সকল কাজের ভিত্তি দুইটি- ১. আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা তথা অবিচল আস্থা এবং বিশ্বাস। আর ২. ইসলামি শরিয়তের ফতোয়া ও জ্ঞানী সুহৃদদের পরামর্শ। (জাওয়ামিউল হিকায়াত)

সুলতান মাহমূদের এ কথা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, তিনি রাজ্য পরিচালনায় কী পরিমাণ জ্ঞানের সম্মান ও জ্ঞানী ব্যক্তির কদর করতেন। সুতরাং যারাই জ্ঞানের সম্মান করবে এবং জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষা ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে; তারাই সম্মানের আসনে আসীন থাকবে। ইনশাআল্লাহ।

প্রজার কল্যাণে দান সুলতান মাহমূদের শাসনামলের আরও একটি ঘটনা। তিনি যেমন ছিলেন আল্লাহ ভিরু; জ্ঞান ও জ্ঞানী কদরকারী তেমনি তিনি ছিলেন প্রজা সাধারণের পাশে দাঁড়ানো দয়াশীল বাদশাহ। প্রজাদের প্রতি তাঁর দানের একটি কথা এসেছে সিয়াসতনামায়-

সুলতান মাহমূদ দেখতে সুন্দর ও সুশ্রী ছিলেন না। একদিন তিনি নিজের খাস কামরায় নামাজ পড়ছিলেন। দুই জন খাদেম তার কাছে আয়না ও চিরুরি রেখে গেল। ঠিক এ সময়ই উজির আহমদ হাসান খাস কামরায় প্রবেশ করলেন এবং অভিবাদন জানালেন।

সুলতান নামাজ শেষে কাবা (রাজকীয় পোশাক) পরলেন এবং মাথায় মুকুট পড়লেন। এরপর আয়নায় চেহারা দেখে মুচকি হাসলেন। সামনে তাঁর উজির উপস্থিত ছিলেন। তিনি উজিরকে জিজ্ঞাসা করলেন- বলতে পারেন, এখন আমি কী ভাবছি?

উজির বললেন- বাদশাহ নামদার! আপনিই বলুন। সুলতান বললেন- আমার আশঙ্কা হয় যে, লোকেরা আমাকে ভালবাসবে না। কেননা মানুষ এমন বাদশাহকেই ভালবাসে যার চেহারাও সুন্দর হয়!

এবার উজির আহমদ হাসান বললেন, বাদশাহ নামদার! কেবল একটি কাজের মাধ্যমেই আপনি প্রজাদের ভালবাসা পেতে পারেন, এমনকি আগুন ও পানির উপরও আপনার ফরমান চলতে পারে।

সুলতান জিজ্ঞাসা করলেন, কী সেই কাজ? উজির বললেন- ‘অর্থকে শত্রু মনে করুন, সব প্রজা আপনার বন্ধু হয়ে যাবে।’ কথাটা সুলতানের খুবই মনঃপুত হল এবং তিনি প্রজা সাধারণের জন্য বখশিশের হাত উন্মুক্ত করে দিলেন। অল্প দিনেই সাম্রাজ্যের চারদিকে সুলতানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। (সিয়াসতনামা)

সূলতান মাহমূদ প্রভাবশালী বাদশাহ ছিলেন। তিনি দেশ পরিচালনা করতেন। তারপরও তিনি জ্ঞানের যেমন সম্মান করতেন ঠিক জ্ঞানী ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। আবার পরামর্শের আলোকে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক দেশ পরিচালনা করতেন। আবার প্রজাদের দান করতেন খুব বেশি। এ সবই সূলতান মাহমূদের অনন্য গুণ। এ গুণগুলো মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে নিয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ইয়ামিনউদ্দৌলা আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে সবুক্তগিন। সাধারণভাবে তিনি মাহমুদ গজনভি ও সুলতান মাহমুদ ও মাহমুদে জাবুলি বলে পরিচিত, ছিলেন। তিনি গজনভি সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাসক ছিলেন। তিনি ৯৯৭ থেকে ১০৩০ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পূর্ব ইরানিয় ভূমি এবং ভারত

উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম অংশ (বর্তমান আফগানিস্তান ও পাকিস্তান) জয় করেন। সুলতান মাহমুদ সাবেক প্রাদেশিক রাজধানী গজনিকে এক বৃহৎ সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধশালী রাজধানীতে পরিণত করেন। তার সাম্রাজ্য

বর্তমান আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান ও পাকিস্তানের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে ছিল। তিনি সুলতান (“কর্তৃপক্ষ”) উপাধিধারী প্রথম শাসক যিনি আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য স্বীকার করে নিজের শাসন চালু রাখেন। নিজ শাসনামলে তিনি ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন।