পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা: নাসিরসহ গ্রেপ্তার ৫

আইন-আদালত ঢাকা দেশ জুড়ে নারী ও শিশু বাংলাদেশ বিনোদন

ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা বিভাগ (উত্তর-তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর ও উত্তরা) এবং সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

তিনি বলেন, জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নাসির উদ্দিন মাহমুদের বাসায় অভিযানকালে বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।পরীমণি কেন ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন, তা জানতে চাইলে হারুন-অর-রশীদ বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব বিষয় নজরে এনে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

ডিবির গুলশান জোনের ডিসি মশিউর রহমান জানিয়েছেন, নাসিরুদ্দীনকে ধরতে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাকে সেখান থেকে আটক করা হয়েছে।
পরীমনির লিখিত এজাহার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রূপনগর থানা থেকে সোমবার সকালে সাভার থানা পুলিশের কাছে পৌঁছায়।

ডিএমপি ও ঢাকা জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা রেকর্ড করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন।

মামলার এজাহারে পরীমনি জানান, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, ও বনিসহ দুটি গাড়ীতে উত্তরার দিকে যান।

‘পথিমধ্যে অমি বলে বেরিবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার ২ মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামত আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গাড়ি দাঁড় করাই।

কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন আমি ভেতরে যায় এবং অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।’

 

এজাহারে পরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমার ছোট বোন বনির প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিলে আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট হতে বের হতেই ১ নং বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১নং আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নং আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।

 

‘১ নং আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ১ নং আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নং আসামিকে বাঁধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করিয়া নীলাফোলা জখম করে। আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিতে গেলে আমার ব্যবহৃত ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়। পুনরায় ফোনটি উঠিয়ে কল দিতে চাইলে আবারও ফোনটি টেনে ফেলে দেয়।’

 

এজাহারে পরী আরও বলেন, ২ নং আসামি (অমি) সহ অজ্ঞাতনামা ৪ জন আসামি ১ নং আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারব। প্রকাশ থাকে যে, ২ নং আসামি অমি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাকে আমার বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং ২ নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৪ জন আসামির সহায়তায় ১ নং আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

 

‘আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত অনুমান ৩টায় আমি আমার গাড়ীযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় আমার সঙ্গীদের সঙ্গে ফিরে আসি। উল্লেখ্য যে, আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আমি আমার পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এই এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।’