সালিস করার নামে পটুয়াখালীর বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওঠা বাল্যবিবাহের অভিযোগ প্রশ্নে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা বের করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। ‘সালিস করার নামে নিজেই করলেন বাল্যবিবাহ’ শিরোনামে রোববার প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
প্রতিবেদনটি নজরে আনা হলে শুনানি নিয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভুক্তভোগী মেয়েটির বিয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সংশ্লিস্ট জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রারকে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সালিস করার নামে বাল্যবিবাহের অভিযোগে ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কি না, তা তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত বলেছেন, তদন্ত বা অনুসন্ধান শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বিবাদীরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তদন্ত বা অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। সম্ভাব্য ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হলো। অবিলম্বে ভুক্তভোগী (মেয়েটি) ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ আগস্ট দিন রাখা হলো।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি আইনজীবী আমাতুল করীম ও একরামুল হক আদালতের নজরে এনে শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, বাল্যবিবাহ রোধের দায়িত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধির। জনপ্রতিনিধি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বিচার না করে অবিচার করে ফেলেছেন। এতে জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে জনগণের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।
রুলে ওই অভিযোগ বিষয়ে আইন অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, নিকাহ রেজিস্ট্রার, ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বক্তব্য শুনতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত বা অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
‘সালিস করার নামে নিজেই করলেন বাল্যবিবাহ’ শিরোনামে প্রথম আলোতে ছাপা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেমের টানে এক তরুণের হাত ধরে বাড়ি ছেড়েছিল কিশোরী।
বিষয়টি জানার পর কিশোরীর বাবা নালিশ দিয়েছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে।
চেয়ারম্যান সালিসে বসার পর মেয়েটিকে পছন্দ হয়ে যায়। পরে তিনি নিজেই অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরদিন ওই স্কুলছাত্রী তালাক দিয়েছেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে। শনিবার সন্ধ্যায় সে পরিবারের কাছে ফিরেছে বলে ওই কিশোরী ও তার বাবা মুঠোফোনে জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান নিজেও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাটি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের। বাল্যবিবাহ ঠেকাতে জনপ্রতিনিধির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা। সেখানে স্কুলপড়ুয়া একটি মেয়েকে বিয়ে করা নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছে। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, মেয়েটির বয়স ১৮। ওই কিশোরীর বাবা শ্রমিকের কাজ করেন।
স্থানীয় লোকজন ও মেয়েটির পরিবারের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজি ডেকে শুক্রবার দুপুরেই পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। বিয়ের কাবিননামায় মেয়েটির জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে থাকা জন্মনিবন্ধন ও পঞ্চম শ্রণি পাসের সনদ বলছে, মেয়েটির জন্ম ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল।