খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষের ভাঙন স্থান থেকে অবৈ’ধভাবে বালু উত্তোলন কোনোভাবেই থামছে না। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বালু মজুদ ও বিক্রির ঘাট। আর বালু বহনকারী ট্রলি ও ট্রাক্টরগুলো বেপরোয়াভাবে যাতায়াত করায় হুম’কিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ সড়কগুলোও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
৪ জুলাই উপজেলা সদরের ভাঙ্গন কবলিত মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা অবস্থায় জাহাঙ্গীরকে নামে একজনকে আটক করেছে কয়রা থানা পুলিশ। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, বালুর ব্যাপারে কথা বললেই চাপাতি ও হাতুড়ি নিয়ে জীবননাশের হুম’কি দেয়া হয়।
এর আগে একই স্থান থেকে বালু উত্তোলনের রিপোর্ট প্রকাশ করায় স্থানীয় সাংবাদিক সুভাষ দত্তকে পিটিয়ে জখম করে পঙ্গু করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও হয়। যে কারণে সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নেই পায় না কেউ।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলায় নির্দিষ্ট কোনো বালু মহল নেই বা সরকারিভাবে ঘাট ইজারা প্রদান করা হয়নি। ইজারার শর্তানুযায়ী ইজারাকৃত নির্দিষ্ট ঘাট ব্যতীত অন্য যেকোনো স্থানে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অ’বৈধ।
অভিযোগ ওঠেছে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে একটি মহল প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নাম ব্যবহার করে কপোতাক্ষর ভাঙ্গন কবলিত স্থান ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে অ’বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তাদের নেতৃতে উপজেলার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, নদীর বিভিন্ন স্থানে অ’বৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এমনকি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অ’বৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়েও বালু তোলার অভিযোগ রয়েছে যাতে হুম’কির মুখে রয়েছে ফসলি জমি ও বসতঘর।
সরেজমিনে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে নদীর পাশে স্তূপ করে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেই তাদের বলা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের বালু।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অব্যাহতভাবে ভাঙ্গন কবলিত স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে লঞ্চঘাট সংলগ্ন সদ্য নির্মিত পাউবোর বেড়িবাঁধ হুমকি’র মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন পন্টুনের সঙ্গে যোগাযোগ রাস্তা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল তাদের। স্থানীয় এমপির প্রচেষ্টায় পন্টুনের সংযোগ রাস্তা হয়েছে। তবে বালু উত্তোলনের ফলে কয়রা সদরের একমাত্র মদিনাবাদ লঞ্চঘাট কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।
মদিনাবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ এই ঘাট সংলগ্ন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে আমরা দিনাতিপাত করছি। বার বার বলার পরেও কিছু হচ্ছে না। পুলিশ, প্রশাসন এসে বন্ধ করে যায়, চলে যাওয়া পর আবার যা তাই। উত্তোলনকৃত বালু বাঁধের ওপর স্তূপ করে রাখায় ওজনের চাপে বাঁধ যেকোনো মুহূর্তে ধ্বসে যেতে পারে।’
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘মদিনাবাদ থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়ার পরই তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার যদি কেউ বালি তোলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈ’ধভাবে বালু উত্তোলনকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’