বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: দেড় বছরের কাজ শেষ হয়নি ১৬ বছরেও

বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: দেড় বছরের কাজ শেষ হয়নি ১৬ বছরেও

ঢাকা দুর্নীতি দেশ জুড়ে স্বাস্থ

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি। শেষ করার দাবিতে ইতিপূর্বে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন, স্মারকলিপি এমনকি লিখিত অভিযোগ পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু এতেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

 

বাসাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বাসাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

 

ওই বছরের ১০ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ এবং হাসপাতালের পুরোনো একতলা ভবন সংস্কারের কাজ পায় মেসার্স সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থা। যার চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।

 

ঐ বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৬ বছরেও প্রকল্পের কাজ শেষ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

 

দরপত্র অনুযায়ী চার কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ৪৪৯ টাকায় দুটি চার তলা, একটি দোতলা ও একটি এক তলা ভবন নির্মাণ এবং পুরোনো ভবন সংস্কারের কথা ছিল।

কাজ চলমান দেখিয়ে ২০০৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঠিকাদার তিন কোটি ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮২ টাকা তুলে নিয়েছেন।
বর্তমানে সব কটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৭৬ ভাগ কাজ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পত্র মাধ্যমে বারবার কাজটি শেষ করার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হয়নি।

 

হাসপাতালের এক সেবিকা বলেন, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনেই মানবেতর দিন কাটাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রয়োজনীয় জনবল বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও অস্ত্রোপচারের কাজ করতে পারছেন না তারা। ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ কিছু সরঞ্জাম স্টোর রুমে রাখা আছে। নতুন ভবন না থাকায় ইতোমধ্যে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।

 

 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল ভবন পরিদর্শন করেছেন। ভবন নির্মাণে নতুন করে সাড়ে আট কোটি টাকা বরাদ্দ হবে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থার প্রকৌশলী ফরিদ হোসেন বলেন, বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতি ছিল। তাই আমরা কাজ শেষ করতে পারিনি। কিন্তু সম্প্রতি তাদের সাথে আমারদের কথা হয়েছে। এ থেকে উত্তোলনে নতুন বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে।

 

 

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই গত ১৬ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি এর দায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

 

 

 

এ ছাড়া প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ মঞ্জুর হলে কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান।