২২ বছর বয়সেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোটিপতি

অর্থনীতি দেশ জুড়ে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে যাচ্ছে। এই বিপ্লবের মূলে আছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বাংলাদেশেও আইসিটির প্রসার দ্রুত হচ্ছে। অনেকেই আইসিটি নির্ভর ক্যারিয়ার গঠনের চেষ্টা করছেন। কেউবা হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। আবার কেউ কেউ হচ্ছেন সফল। তেমনি এক সফল ফ্রিল্যান্সারের কথা জানাচ্ছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত

 

মো. সাব্বির খান, বাড়ি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর গ্রামে। বাবা মো. জয়দুল খান একজন কৃষক, মা ছিলেন গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সাব্বির সবার ছোট। সাব্বির রানীপুকুর হাই-স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং রংপুর মুসলিম এইড ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করেন।

 

 

এরপর সাব্বির উচ্চ শিক্ষার জন্য চায়না যান। কিন্তু হঠাৎ করে মা অসুস্থ হওয়াতে চায়না থেকে দেশে ফেরে সাব্বির। দেশে ফেরার কয়েকদিন পরেই তার মা মারা যাওয়ায়, সাব্বিরের বাবা আর তাকে চায়না যেতে দেননি।

 

 

ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ ছিল সাব্বিরের। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মোবাইলে ইন্টারনেট নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করত। যদিও ওই সময় থ্রি-জি ইন্টারনেটের যুগ ছিল না। তারপরও টু-জি দিয়ে কোনো রকম ইন্টারনেট চালানোর চেষ্টা করতো। অভাবের সংসারে সাব্বির অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন। নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন সাব্বিরের পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

 

 

এরপর সাব্বির রানীপুকুর ছেড়ে রংপুর শহরে যান। সেখানে এক বন্ধুর ভাইয়ের সাহায্যে একটা চাকরি পান সাব্বির। ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করার পড়েও নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন তিনি। এরপর সেখানে একবছর চাকরি করে পড়ালেখা চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে ও বাবার থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসএসসির পর ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা কম্পিউটার কেনেন। এই কম্পিউটারই হয় তখন তার সোনার হরিণ। কম্পিউটার দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে সাব্বির এখন মাসে আয় করেন চার-পাচ লাখ টাকা।

 

 

 

সাব্বির বলেন, ‘কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা ভর্তি হয়ে ওই কম্পিউটার দিয়ে একা একা কাজ করার চেষ্টা করতাম। নিজের খরচ দিয়ে নিজের পড়াশোনা শেষ করার চেষ্টা করতাম। খুব অভাবে দিন কাটাইছি। এমনও দিন গেছে যে একবেলা ভাত খাইতে পায়নি তারপরও নিজের বাবাকে কখনও টাকার জন্য চাপ দেইনি, যে বাবা আজকে টাকা লাগবে। আমি সব সময় বোঝার চেষ্টা করতাম যে বাবারা কত কষ্ট করে আয় করে এবং কত কষ্ট করে সন্তানদের খাওয়ায়। কষ্টের মাঝেই কেটে গেলো কয়েকটি সেমিস্টার। কিন্তু এভাবে আর কত! কিছুতো একটা করতে হবে। তাই আমার কাছের বন্ধু ও বড় ভাইয়ের পরামর্শে কম্পিটারে ফ্রিল্যান্সিং করার চিন্তা করলাম’।

 

 

 

এরপর বেশ কিছু মার্কেটপ্লেস-এ কাজের জন্য আবেদন করেন সাব্বির। তবে সেখানে হতাশ হন তিনি। বারবার আবেদন করার পরেও কোনো কাজ পাচ্ছিল না সাব্বির। তারপর এমনিতেই কিছু বড় ভাইদের গ্রাফিক্সের কাজসহ কম্পিটারের নানা কাজ করে দিয়ে সামান্য কিছু আয় করতেন তিনি। এরপরে ইউটিউবে অনেক ঘাটাঘাটি, অনেক রিসার্স করার পরেও তেমন ভালো কোনো ভালো কাজের সন্ধান পেলেন না সাব্বির।

 

 

 

সাব্বির বলেন, ‘বারবার চেষ্টা করার পরেও কাজ না পেয়েও হাল ছাড়িনি। আস্তে আস্তে একসময় এমন এমন আইডিয়া মাথায় আসলো। সেগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতে লাগলাম। যেমন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডেভলোপমেন্ট ও গ্রাফিক্স ডিজাইন। এরপর ধীরে ধীরে আমি এই সব সেক্টরেই কাজ করে গেলাম। তারপর আমার কাছে ডিজিটাল মার্কেটিংটাই ভালো মনে হলো। এজন্য ডিজিটাল মাঠ নিয়ে খুব ভালোভাবে কাজ করা শুরু করলাম।

 

 

 

দিন-রাত এক করে কাজ করতে থাকতাম এবং তখনই আমি সাফল্যের দেখা পেলাম। আল্লাহর রহমতে এই কাজেই আমি সফল হই। এখন আমি নিজেই একটা ডিজিটাল মার্কেটিং-এর কোম্পানি দিয়েছি। যার বর্তমান মার্কেট মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এখন আমি মাসে এখান থেকে প্রায় চার-পাচ লাখ টাকা আয় করি। ডিজিটাল মার্কেটিং এ আমার মোট আয় ৬ কোটি টাকা’।
সাব্বিরের মতো অনেক বেকার যুবকদের প্রতি সাব্বিরের পরামর্শ যুবকরা যেনো তাদের বাবা-মার কষ্টটা বোঝে। বাবা-মার টাকা থাকলেও নিজে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করে তাহলেই যুবকরা একদিন সফল হবেই এবং যা করার চেষ্টা করবে তা যেন হালাল পথে হয়। তাহলে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করবেন।

 

 

নতুনদের ফ্রিল্যন্সারদের প্রতি সাব্বিরের পরামর্শ অযথা মোবাইলে গেম খেলে সময় নষ্ট না করে ফ্রিল্যান্সিং করার ট্রাই করুন। পাশাপাশি পড়াশোনা ভালো করে করুন এবং ফ্রিল্যান্সিং-এ যে বিষয়টা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবেন।

 

সেটির ভবিষ্যৎ ভালোভাবে দেখে নিবেন তারপর শুরু করবেন অযথা এমএলএম ব্যাবসার মত নানা ধরনের ওয়েবসাইটে, যেগুলোতে অ্যাকাউন্ট খোলার সাথে সাথে ইনকাম করা যায়। সেইগুলো বাদ দিয়ে প্রফেশনাল ভাবে অনলাইনে কাজ শুরু করুন। বিশ্বস্থ কোম্পানির কাজ করুন তাহলেই দেখবেন সফলতা আসবে এবং আপনি সফল হবেন।