maleshiya pm

মালয়েশিয়ায় তিন বছরে তিনজন প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক প্রবাস

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন মালয়েশিয়ায় যে রাজনৈতিক সংকট বিরাজমান তার সূত্রপাত হয় ১৪ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে । মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে মেঘ জমে তখন যখন তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা বারিশান ন্যাশনাল থেকে পদত্যাগ করে ২০১৬ সালে নতুন দল ঘঠন করে মাহাথির মোহাম্মদ । পরে একসময়ের রাজনৈতিক প্রতিদন্ধি আনোয়ার ইব্রাহিমকে মিত্র করে পাকাতান হারাপানে জোট ঘঠন করেন মাহাথির ।

২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বারিশান ন্যাশনাল জোটের নাজিব রাজ্জাকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১১৩ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে পাকাতান হারাপান জোট ।

১৪ তম জাতীয় এ নির্বাচনটি ছিলো মাহাথির মোহাম্মদের জন্য ঐতিহাসিক দিন । যে জোটের হয়ে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন এবার সেই জোটকেই পরাজিত করেছেন ।

স্থানীয় গণমাধ্যম গুলোর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নির্বাচিত হলে ‘১০০ দিনে ১০ টি প্রতিশ্রুতি’ পূরণের প্রচারণা চালায় মাহাথির মোহাম্মদ

। নিম্ন আয়ের গোষ্ঠিদের লক্ষ্য করে আরো জনবহুল নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে ভূ-রাজনৈতিক বড় কৌশলগত প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে মি: মাহাথির সরকার তার প্রতিশ্রুতির উপর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে থাকে ।

পাকাতান হারাপান জোট ও মাহাথির মোহাম্মদের নিজের দলের মধ্যে অন্তদন্দ শুরু হয় । চলমান সংকট ছড়িয়ে পড়ে তখন যখন মাহাথির এর নিজ দল বারসাতুর নেতৃবন্দসহ পাকাতান হারাপান জোটের নেতারা বিরোধী দলগুলির সাথে হাত মিলানের সিদ্ধান্ত নেয় ।

সে সময় অনেকটা রাজনৈতিক চাপের মুখেই প্রায় দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করে গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে পদত্যাগ করেন মি: মাহাথির ।

পদত্যাগের প্রায় ৭২ ঘন্টা পরে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে তার নীরবতা ভাঙেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যাও দেন । মাহাথির বলেছিলেন-

“আমি পদত্যাগ করেছি কারণ আমি ক্ষমতা এবং পদে থাকতে চাইনি এবং আমার সমস্ত উদ্দেশ্যকে শেষ করতে চাইনি। আমার কাছে ক্ষমতা ও অবস্থান একটি সমাপ্তির মাধ্যম এবং আমাদের উদ্দেশ্য দেশের মঙ্গল।”

মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পদত্যাগ

দেশটির ফেডারেল সংবিধানের বিধি অনুযায়ী জাতীয় সংসদের ১১২ জন আইন প্রণেতার সমর্থন নিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন প্রধানমন্ত্রীত্ব পায় । ২০২০ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালানার দায়িত্ব পায় মি: মহিউদ্দিন ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখা ও কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা করার মতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে গঠন হয় মহিউদ্দিন প্রশাসন । কোভিড-১৯ সংক্রমনের শুরুর দিকে সফল হয়ে বিশ্ব দরবারেও প্রশংসা কুঁড়ায় মালয়েশিয়া ।

তবে পরবর্তীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয় যা এখনও চলমান । মহামারী মোকাবিলায় ব্যার্থতা,অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অদক্ষতা,রাজাকে ভুল বুজিয়ে দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করার মতো বেশ কিছু অভিযোগ উঠতে থাকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে ।

মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের প্রশাসনে থাকা দেশ পরিচালনার ব্যাপক অভিজ্ঞতার উমনু দলের সভাপতি আহমেদ জাহিদ হামিদি মুহিউদ্দিনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে ।

এর পর থেকে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে থাকে ফলে ১৭ মাস দেশ পরিচালনার মাথায় ১৬ আগষ্ট পুরো মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে পদত্যাগ করে মুহিউদ্দিন । তিনি একটি টেলিভিশন ভাষণে বলে ছিলেন-

“আমি আশা করি অবিলম্বে একটি নতুন সরকার গঠন করা যাবে যাতে এই দেশের প্রশাসন ব্যাহত না হয় । আগামী দুই মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু আমরা অক্টোবর মাসে কোভিড-১৯ প্রতিরোধকতা অর্জন করতে পারি ।”

নব্য প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব

মহামারী ও সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির নবম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব । দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এ দেশটির রাজা ২০ আগষ্ট শুক্রবার নবম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবকে সম্মতি দিয়েছেন।

১১৪ জন আইনপ্রণেতার ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় ইসমাইল সাবরিকে ফেডারেল সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪০ (২) (এ) এবং ধারা ৪৩ (২) (এ) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

শনিবার ২১ আগস্ট ৬১ বছর বয়সী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব মালয়েশিয়ার নবম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার জনগণ তিন বছর তিন মাসে তিনজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে ।

ইসমাইল সাবরি প্রশাসনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মহামারী মোকাবিলা করার পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং একিই সাথে চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশকে উত্তরণ ঘটানো ।

এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে সাবরি প্রশাসন ১৫ তম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে নাকি মালয় রাজনীতির আকাশে আবারও মেঘ জমনে,এটি কোটি টাকার প্রশ্ন হলেও উত্তরের জন্য আসলে অপেক্ষা করতে হবে ।