স্কুল-কলেজ খুলছে আগামীকাল

স্কুল-কলেজ খুলছে আগামীকাল।

দেশ জুড়ে বাংলাদেশ শিক্ষা

দেড় বছর বন্ধ থাকার পর স্কুল-কলেজ খুলছে আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর। স্কুল খোলার ঘোষণার পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন শিক্ষক ও স্কুল সংশ্লিষ্টরা। নেওয়া হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রস্তুতি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হবে না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, শুধু পিইসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করতে পারবে। বাকিদের একদিন স্কুলে সরাসরি ও সপ্তাহের বাকি দিন ক্লাস হবে অনলাইনে। স্কুল প্রধানরা শিফটের ভিত্তিতে রুটিন তৈরি করবেন।

 

পৃথক পৃথক নির্দেশনা: শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুাযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১ দফা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ১৬ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করবে।

 

নির্দেশনাগুলো হলো:

১. ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষা প্রাতষ্ঠানে আসবে;

২. প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একদিন প্রতিষ্ঠানে আসবে;

৩. সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করবে;

৪. রুটিনের সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাস নির্ধারণ করা যেতে পারে;

 

 

৫. যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান ওই সব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন করবে;

৬. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ডিগ্রি, সম্মান ও মাস্টার্স পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ ও ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রুটিন প্রণয়ন করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবে;

 

৭. রুটিন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন না হয়;

৮. রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়;

 

৯. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপাতত অ‌্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে;

১০. প্রতিদিন নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে হবে;

১১. পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস রুটিন তৈরির ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।

এছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার ১৬ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে।

 

 

নির্দেশনাগুলো হলো:

১। দৈনিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরৎ (পিটি) করবে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে।

২। শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা জেড বিন্যাসে বসবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসবে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একই শ্রেণিকে একাধিক গ্রুপে ভাগ করে একাধিক কক্ষে ও একাধিক শিক্ষকের সহায়তায় পাঠদান চালাতে হবে।

৩। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যযক্রম বন্ধ থাকবে।

৪। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সপ্তাহে ছয় দিন চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন আসবে।

৫। একই দিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

৬। শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় রেখে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে একাধিক শিফট কিংবা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণির বা সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির পাঠদানের ব্যবস্থা রেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হালনাগাদ পাঠ্যসূচি অনুসরণ করবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হলে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে পাঠদান পরিকল্পনা করা যাবে।

 

৭। শ্রেণি কার্যক্রমে গ্রুপ ওয়ার্ক ও পেয়ার ওয়ার্কের মতো সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী শিখনকাজ আপতত বাদ রাখতে হবে।

৮। শিক্ষকরা মাস্ক পরেই ক্লাস নেবেন। শিক্ষার্থীদেরও মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন শিক্ষকরা।

৯। ক্লাস শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। সব শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের একত্রে শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করতে দেওয়া যাবে না। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একের পর এক কক্ষের শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করবে।

১০। একধিক শিফটে ক্লাস চললে আগের শিফট ও পরের শিফটের ক্লাস শুরুর মাঝে অন্তত ৩০ মিনিটের বিরতি রাখতে হবে।

১১। শিক্ষার্থীরা যার যার পানির বোতল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবে।

১২। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি ঘরে বসে শিখি, বাংলাদেশ বেতার ও সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম, গুগলমিটের মাধ্যমে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম ক্লাস রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অব্যাহত রাখতে হবে।

 

১৩। যে শিক্ষার্থী নিজের বা পরিবারের সদস্যদের করোনা লক্ষণ বা সংক্রমণের কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে না, তারা ঘরে বসে শিখি এবং অনলাইন পাঠদানে অংশ নেবে।

১৪। এ কারণে ওই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে অনুপস্থিত গণ্য করা যাবে না।

১৫। কোনো এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত বিপৎসীমা পার হলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করবে।

১৬। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশিকা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতিপালন করতে হবে।

মনটিরিং কমিটি গঠন: এদিকে খোলার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা পালন নিশ্চিত করতে ও সঠিকভাবে অনুসরণের জন্য মনিটরিং টিম গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সরকারি বেসরকারি সব স্কুল-কলেজকে মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।

 

 

কতটা প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানগুলো: প্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তে খুশি। পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সবকিছু পরিষ্কার করে রেখেছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষে এসে তার চিরচেনা রূপ ফিরে পায় সে ব্যাপারে যথেষ্ট সোচ্চার রয়েছেন শিক্ষকরাও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রাদার লিও পেরেকা বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের রেগুলার পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান ছিলো। যে কারণে আমাদের পরিষ্কার-পরিছন্নতা নিয়ে নতুন করে প্রস্তুতির জন্য আলাদা চিন্তা করতে হচ্ছে না। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ছিলো। শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের নিয়মিত কাজ চালিয়ে গেছেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুধু আমাদের পার্থক্য ছিল স্কুল ও বাসা। পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় আমাদের নতুন করে ঝামেলা পেতে হচ্ছে না।’

 

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মোল্লা বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। অল্প সময় পেলেও শিক্ষরাও শিক্ষার্থীদের গাইড করবে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের গাইড দেওয়ার সব প্রস্তুতিও রয়েছে স্কুলের। স্কুল ও কলেজভবন, ক্লাসরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। প্রতি শুক্র ও শনিবারে স্কুল ও কলেজ ভবনে বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কারণে পরিষ্কার রাখতে হয়।

অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, যেহেতু সময় কম, তাই স্কুলের পাশাপাশি অবশ্যই বাসায় ছাত্রদের পড়াশোনার প্রতি নজর রাখবেন। আর অবশ্যই ছাত্রদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্কুলে পাঠাবেন।’

ওয়াইডব্লিউসিএ জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল র‌্যাচেল প্রভা বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষ ওয়াশরুম, মাঠ পরিষ্কার কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে। আমাদের রেগুলার কার্যক্রম চলমান।’

 

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ‌্যান্ড কলেজের বয়েজ শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল খালেদ মোশারফ বলেন, ‘১২ তারিখ থেকে স্কুল চালু করতে আমরা প্রস্তুত আছি। লকডাউন ছাড়া অন্যসব সময় আমরা বিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছি। এখনও সব ঠিক আছে।’

 

খুলছে না প্রাক-প্রাথমিক স্তর: আগামীকাল স্কুল-কলেজ খুললেও প্রাক-প্রাথমিক স্তর খোলার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সশরীর চালু করা হবে। এখন প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি থেকে ক্লাস শুরু হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রতন কুমার পণ্ডিত বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স তুলনামূলক অনেক কম। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কষ্টকর। তাই তাদের বিষয়ে পরে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’