হালাল জীবিকার ব্যবস্থা করা ফরজ

হালাল জীবিকার ব্যবস্থা করা ফরজ

ধর্ম

মহান আল্লাহ মানবজাতিসহ অগণিত সৃষ্টবস্তুর রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন, সবার জন্য রিজিক নির্ধারিত করেছেন। তবে যারা হারাম রিজিক ভক্ষণ করে, তাদের ওই পরিমাণ হালাল রিজিক তাদের কমিয়ে দেওয়া হয়। হালাল রিজিক ভক্ষণ করা ঈমান রক্ষার জন্য জরুরি। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে গ্রহণ করা খাবার খেয়ে নেক আমল করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। হারাম রিজিক ভক্ষণ দ্বারা ঈমান ও আমল নষ্ট হয়। তাই মহান আল্লাহ হালাল রিজিক ভক্ষণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নিম্নে হালাল রিজিক গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো—

 

বৈধ রিজিক তালাশের নির্দেশ : বৈধ রিজিকের অন্বেষণ করা ফরজতুল্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে বেশি পরিমাণ স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমুআ, আয়াত : ১০)। এ আয়াতে

 

মহান আল্লাহ নামাজ সম্পন্ন করার পর হালাল রিজিক তালাশের নির্দেশ দিয়েছেন। হালাল রিজিক সন্ধানের একটি উপায় হলো ব্যবসা করা। মহান আল্লাহ সঠিক পন্থায় ব্যবসা করা হালাল ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল ও সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

নবীদের জন্য হালাল রিজিক গ্রহণের নির্দেশ : পবিত্র কোরআনে নবীদের প্রতি হালাল রিজিক সন্ধানের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো ও সত্কর্ম করো। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি অবগত।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)

হালাল ব্যবসায় মানুষের সিংহভাগ রিজিক : ইমাম গাজালি (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করো। কেননা, তাতে ৯ দশমাংশ জীবিকা আছে।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৪)

সত্যবাদী ব্যবসায়ীর জন্য সুসংবাদ : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমানতদার সত্যবাদী ব্যবসায়ী পরকালে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গী হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১২০৯)

নবীরা হালাল উপার্জন করতেন : ইমাম বুখারি (রহ.) বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, প্রত্যেক নবী ছাগল চরাতেন। সাহাবিরা বলেন, আপনিও কি এমনটি করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি মক্কাবাসীর ছাগল কয়েক কিরাত (আরবের পরিমাপ বিশেষ) দ্বারা চরিয়েছি।’ (আল জামে আস সহিহ, হাদিস নম্বর : ২২৬২)

মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিজের হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম খাবার খায় না। আর নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) তাঁর নিজের হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ২০৭২)ভূমির মালিককে চাষ করার নির্দেশ : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার জমি আছে সে নিজেই চাষ করবে।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ২৩৪০)

 

অন্য হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যেকোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করবে বা ক্ষেত-খামার করবে তার থেকে কোনো পাখি খাবে বা মানুষ বা প্রাণী খাবে তা দ্বারা সে সদকার পুণ্য পাবে।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ২৩২০)

 

হারাম রিজিক বর্জনের নির্দেশ : জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর সুন্দরভাবে ইবাদত করো। কেননা, কোনো আত্মা তার রিজিক পরিপূর্ণ হওয়া ছাড়া ইন্তেকাল করবে না—যদিও তাতে দেরি হয়। তাই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর সুন্দরভাবে তালাশ করো। তোমরা হালালকে গ্রহণ করো ও হারামকে বর্জন করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৪৪)

 

হারাম গ্রহণ করলে হালাল রিজিক কমে যায় : হিলয়াতুল আউলিয়াতে আসবাহানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যেকোনো মুমিন বা ফাসিকের রিজিক হালালভাবে আল্লাহ লিপিবদ্ধ করেন। যদি সে তার কাছে রিজিক আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দেন। আর যদি অধৈর্য হয়ে হারাম ভক্ষণ করে, আল্লাহ তার হালাল রিজিক থেকে কমিয়ে দেন।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া ও তাবাকাতুল ফুকাহা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২৬)

 

হালাল উপার্জন জান্নাতে প্রবেশের কারণ : আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল রিজিক ভক্ষণ করল আর সুন্নত মতে আমল করল এবং মানুষ তার কষ্ট থেকে নিরাপদ রইল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এ ধরনের লোক বর্তমানে অনেক। তিনি বলেন, আমার পরে তা কয়েক যুগ পাওয়া যাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫২০)

 

অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর দরবারে নুমান বিন কাউকাল (রা.) এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি বলেন, যদি আমি ফরজ নামাজ আদায় করি, হারামকে হারাম মনে করি ও হালালকে হালাল মনে করি—আমি কি জান্নাতে যাব? নবী (সা.) বলেন, হ্যাঁ যাবে।’

(মুসলিম, হাদিস : ১৫)

হালাল জীবিকা তালাশ করা ফরজ : নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল রিজিক তালাশ করা অন্য ফরজের পরে ফরজ।’ (আল মুজামুল কবির, হাদিস : ৯৯৯৩) সারকথা হলো, হালাল রিজিক তালাশ করা প্রত্যেক মানুষের ওপর ফরজ। হারাম রিজিক গ্রহণ করলে পরকালে এর জবাবদিহি করতে হবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক