সিয়ামের মাসআলা-মাসায়েল : এক

ধর্ম

এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রেজামন্দি লাভের অবারিত সুযোগ নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে মাহে রমজান। সহীহ-শুদ্ধভাবে রোযা পালন এবং সিয়ামের মাসের অন্যান্য আমল সঠিকভাবে জেনে-বুঝে করার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও এ সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল জানা।

১. রমজানের পূর্বে সওমের নিষেধাজ্ঞা

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘তোমাদের কেউ যেন একদিন বা দু’দিনের সওমের মাধ্যমে রমজানকে এগিয়ে না আনে, তবে কারো যদি আগের অভ্যাস থাকে, তাহলে সে ওই দিন সওম রাখবে।’‎ [ বুখারী: ১৮১৫, মুসলিম: ১০৮২]

তিরমিযিতে হাদিসটি এভাবে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

‘তোমরা একদিন বা দু’দিনের মাধ্যমে (রমজান) মাস এগোবে না, তবে সেদিন যদি সওমের দিন হয়, যা তোমাদের কেউ পালন করত…’

শিক্ষা ও মাসায়েল

এক. রমজানের সতর্কতার জন্য তার পূর্বে সওমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ‎ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, হাদিসের মর্মার্থ : তোমরা সওমের মাধ্যমে রমজানের সতর্কতার নিয়তে রমজানকে এগিয়ে আনবে না। [ফাতহুল বারী: ৪/১২৮]

ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, ‘আহলে ইলমের আমল এ হাদিস মোতাবেক। তারা রমজান মাস আসার আগে রমজান হিসেবে সওম পালন করা পছন্দ করতেন না। হ্যাঁ কেউ যদি আগে থেকে নির্দিষ্ট দিন সওম পালন করে, আর সেদিন রমজানের আগের দিন হয়, তবে এতে তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই’। [সুনানে তিরমিযী: ৬৮৪]

দুই. রমজানের আগে [রমজানের সাথে লাগিয়ে] নফল সওম রাখা নিষেধ।‎ [ফাতহুল বারী: ৪/১২৮]

তিন. এদিন যার সওমের দিন, সে এ থেকে ব্যতিক্রম, যেমন ‎কাফফারা বা মান্নতের সওম, এবং যার এ দিন নফল সওমের অভ্যাস রয়েছে, যেমন সোমবার ও বৃহস্পতিবার।

চার. এ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সবচে’ যৌক্তিক যে হিকমত বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো– রমজানের সওম শরয়ী চাঁদ দেখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সুতরাং যে শরয়ীভাবে চাঁদ দেখার ‎এক বা দু’দিন আগে সওম রাখল সে শরীয়তের এ বিধানে ত্রুটির নির্দেশ করল, এবং যেসব ‘নস’ বা দলিলে চাঁদ দেখার সাথে সওম সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তা সে প্রত্যাখ্যান করল।‎ [ফাতহুল বারী: ৪/১২৮]

পাঁচ. এ হাদিসে ‘রাফেযি’ সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ রয়েছে, যারা চাঁদ না দেখে সওম পালন বৈধ বলে। [ফাহুল বারী: ৪/১২৮]

ছয়. এ হাদিস থেকে জানা গেল, নফল ও ফরয ইবাদতের মাঝে প্রাচীর ও বিরতি রয়েছে, যেমন শাবানের নফল ও রমজানের ফরযের বিরতি সন্দেহের দিন সওম পালন করা হারাম। অনুরূপ রমজানের শেষ ও শাওয়ালের ‎প্রথম দিন তথা ঈদের দিন সওম পালন করা হারাম। ‎ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু‎ ও একদল সলফ ফরয ও নফল সালাতের মাঝে বিরতি সৃষ্টি করা মোস্তাহাব বলেছেন, যেমন কথাবার্তা বলা বা নড়াচড়ার করা বা সালাতের স্থানে আগ-পিছ হওয়া। [আল-ইস্তেযকার: ৩/৩৭১]

সাত. শরীয়ত আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব, তাতে বৃদ্ধি বা হ্রাস করা বৈধ নয়, কারণ তা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি অথবা দ্বীন থেকে বিচ্যুতির আলামত। সতর্কতামূলক রমজানের আগে রমজানের নিয়তে সওমের নিষেধাজ্ঞা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট ‎হয়।

অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ