প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, আমাদেরও বাড়তে পারে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ স্বাস্থ

বাংলা‌দে‌শের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ফের করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, তাই আমাদেরও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা র‌য়ে‌ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার মহাখালী জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (নিপসম) অডিটরিয়ামে জাতীয় পুষ্টি দিবস ২০২২ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সঠিক পুষ্টিতে সুস্থ জীবন’।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব‌লেন, বাংলাদেশে এখন খুব বেশি লোক করোনার টিকা নেওয়ার বাকি নেই। যারা টিকা পায়নি তারা টিকা দিতে চায় না। অনেকে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মিলায়। কিন্তু তাদের জন্যসংখ্যা অনেক কম। আমরা দিনে এক কোটি টিকাও দিয়েছি। আমরা ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দিয়েছি।

জাহিদ মালেক বলেন, মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। ভালো খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে। ভালো খাওয়ার বলতে পুষ্টিকর খাবার। দেশে পুষ্টি সেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। মানুষকে এর মাধ্যমে সেবার পাশাপাশি কী খেতে হবে কী খাওয়া উচিত নয়, তাও শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা লবণ পরিহার করতে বলি। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার বর্জন করতে বলা হয়। মানুষকে সচেতন করতে অনেক জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

তিনি বলেন, সংক্রামক ব্যাধি টিবি, পোলিও, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। এ জন্য আমাদের মৃত্যু হার কমেছে। কিন্তু অসংক্রামক রোগ অনেক বাড়ছে। ক্যান্সারের মতো রোগ বাড়ছে। এসবের জন্য খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণের দিকে নজর দিতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যেটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

করোনার সময় আমরা পুষ্টিকর খাবার খেতে বলেছিলাম। এখন গড়ে ১২০টা ডিম খায় মানুষ। মানুষের ক্যালোরিও আশপাশের দেশ থেকে বেশি। এখনও দরিদ্র সীমার নিছে ১০-১৫ শতাংশ মানুষ আছে তা জানি। কিন্তু আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আছে।

তিনি বেশি করে ফল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে বলেন, এখন ফলের মৌসুম। বেশি করে ফল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। এর সঙ্গে ডিম, দুধ খাওয়াতে হবে। দেশের মানুষ আগে খর্বাকৃতির ছিল। যেটা আগে ৫০ শতাংশ ছিল তা এখন ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। বাচ্চাদের ফিডিংয়ের বিষয়ে সরকার গুরুত্বারোপ করছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, আধুনিকতায় আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেলেও কিছু জায়গায় পিছিয়ে গিয়েছে। সন্তানের জন্য মায়ের থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাচ্চার শাল দুধ খাওয়া‌নো। কিন্তু সেটা ঠিকমতো বাচ্চারা পায় না। অধিকহারে সিজার হওয়ায় প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি হওয়া ভালো। যতবেশি সিজার ততবেশি সমস্যা বাড়ছে। তাই এসব বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার খুরশিদ আলম বলেন, স্বাধীনতার শুরু থেকে আমাদের নান পুষ্টি সমস্যা ছিল। আমাদের মানুষজনের ওজন কম ছিল, স্বাস্থ্য কম ছিল। এখন তা কমে এসেছে। তবে নগরায়নের ফলে পুষ্টি চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য কমিউনিটি ক্লিনিককে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।

জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারাদিন রোজা রেখে না খেয়ে সন্ধ্যায় আমরা খাচ্ছি, কিন্তু কি খাচ্ছি সেটা আপনারা জানেন। প্রতি তিনজনে একজন এনসিডিতে মারা যাচ্ছে। এজন্য আমাদের পুষ্টি নিয়ে সচেতন হতে হবে। আমাদের সুস্থ থাকতে হলে নতুন যে ফাস্টফুডের বিপদ এসেছে সেটিকে বাসা থেকে বিদায় জানাতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চেয়ারম্যান এম ইকবাল আর্সলান, স্বাচিপের মহাসচিব এমএ আজিজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অধিনায়ক (বিএমএ) এহতেশামুল হক চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. জোবায়দা নাসরিন, জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।