ভারতীয় ক্রিকেটে ‘নতুন ধোনি’র জন্ম

খেলাধুলা

স্পোর্টস ডেস্ক: একজন বিজয়ী অধিনায়কের আচরণই এখন ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হার্দিক পান্ডিয়ার মধ্যে এমন কী গুণ আছে, যেটা দিয়ে প্রথম আসরেই তিনি গুজরাটকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে ছাড়লেন!

কী এমন মহিমা তার, যে ট্রফিটা ছেড়ে দিয়ে এক কোনায় দাঁড়িয়ে যান! অবশেষে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম একমত হচ্ছে যে, আইপিএল-১৫ এর ফাইনাল তাদের ভারতীয় ক্রিকেটে একজন ‘নতুন ধোনি’র জন্ম দিলো। মহেন্দ্র সিং ধোনিও ঠিক এ কাজটাই করতেন।

বিসিসিআই কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ট্রফিটা নিয়ে তুলে দিতেন সতীর্থদের হাতে এবং এরপর দাঁড়িয়ে যেতেন একপাশে। অথচ, যে হার্দিক পান্ডিয়াকে এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি কী সেই হার্দিক পান্ডিয়া? বছর কয়েক আগের কথা।

বলিউড পরিচালক করণ জোহরের শো’য়ে গিয়ে এমন একটি মন্তব্য করেছিলেন পান্ডিয়া, যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। আট থেকে আশি, ভারতীয় অলরাউন্ডারের উপর ক্ষোভ উগরে দিতে ছাড়েনি কেউই।

যদিও এরপর নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে সেসব বিতর্কে ইতি টেনেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এবারের আইপিএল যে পান্ডিয়াকে দেখল, তা একেবারে অন্যরকম। আগের হার্দিকের সঙ্গে এখনকার হার্দিকের কোনোই মিল নেই।

আগের সেই হার্দিকের ছিল দুরন্ত এক স্বভাব। শরীরজোড়া ট্যাটু। দু’কানে হিরের দুল ঝকঝক করছে। গলায় গাম্ভীর্য। মধ্যে মধ্যে হাসি। কিন্তু এখনকার হার্দিক? অনেক শান্ত। অনেক পরিণত। যিনি হারলে প্রকাশ্যে ভেঙে পড়েন না। জিতলে প্রকাশ্যে উচ্ছ্বসিতও হন না।

আবির্ভাবেই অধিনায়ক হিসেবে আইপিএল ট্রফি জিতেও না। বরং ট্রফি নিয়ে এসে সতীর্থদের হাতে দিয়ে নিজে সরে যান ফ্রেমের এক কোণায়। এই হার্দিক টিম জেতার পর স্লিভলেস জার্সিতে মাঠে নামেন বটে কিন্তু পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে পরে নেন টিম জার্সি।

জয়সূচক ছক্কা মারার পর হেলমেট খুলে ২২ গজের উপর যখন শুভমান গিল সিংহগর্জন করছেন, হাত থেকে ব্যাট ফেলে দিয়ে জয়ের স্ট্রোক-মারা সতীর্থের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন নন স্ট্রাইকার ডেভিড মিলার, তখন তাদের অধিনায়কের মুখে মৃদু হাসি। মৃদুই।

যে হাসি চওড়া হল নাতাশা মাঠে নেমে এসে সফল স্বামীকে জড়িয়ে ধরার পর। স্ত্রীকে আলিঙ্গনাবদ্ধ রেখেই হার্দিক-২ এগোলেন মাঠের মধ্যে। একে একে হাত মেলালেন প্রতিপক্ষের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। বর্তমোনের হার্দিক পান্ডিয়া অনেক পারিবারিক।

স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে থাকতে-চাওয়া এক সফল এবং নোঙর-ফেলা পেশাদার। যে সাফল্যের প্রকাশভঙ্গিতে কোনও ঔদ্ধত্য নেই। আত্মবিশ্বাস আছে। এখন নিজের চেয়ে দলের কথা অনেক বেশি বলেন। পূর্বসূরি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো।

ধোনিই মূলতঃ পান্ডিয়ার আসল হিরো। বদলে দেয়ার নায়ক। ধোনির কাছ থেকেই শিখেছেন জীবনের কঠিন পাঠ। ধোনির নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটেছিল তার। এ কারণেই দেখা গেলো ধোনির মত একেবারেই শান্ত, ধীরস্থির।

দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। ভারতীয় পত্রিকাগুলো তো স্বীকৃতি দিয়েই দিলো- হার্দিক পান্ডিয়ারূপে নতুন ধোনিরই জন্ম দিলো আইপিএল-১৫।