টোল দিতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার

বাংলাদেশ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক) ধলেশ্বরী ও ভাঙ্গার টোল প্লাজায় গাড়ির দীর্ঘজট তৈরি হওয়ায় দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে নতুন করে এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় শুরু হয়। টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে যাত্রী ও চালকদের এই দুই স্থানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে।

তবে প্রথম দিন হিসাবে ভাঙ্গায় ৩টি কাউন্টার দিয়ে টোল আদায় শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গাড়ির জট ৫ কিলোমিটারে গিয়ে ঠেকলে ধীরে ধীরে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দুপুর পর্যন্ত ৮টি কাউন্টার চালু করা হয়। ফলে দুপুরের পর গাড়ির চাপ কমতে থাকে। বিকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও সন্ধ্যার পর গাড়ির চাপ আবার বাড়তে থাকে। রাত ৮টায় ভাঙ্গার টোলপ্লাজায় গাড়ির জট দুই কিলোমিটার গিয়ে ঠেকে।

ধলেশ্বরী টোল প্লাজায়ও একই অবস্থা। সকালের দিকে গাড়ির দীর্ঘজট তৈরি হয়। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও বিকাল থেকে গাড়ির জট বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নাগাদ গাড়ির জট গিয়ে ঠেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত। কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) টোল আদায় করছে। খবর ভাঙ্গা (ফরিদপুর), কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) ও লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধির।

ভাঙ্গা : ভাঙ্গার টোলপ্লাজায় কথা হয় যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে। তারা বলেন, টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকেই গাড়ির দীর্ঘজট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা টোল প্লাজার সামনে যানজটে আটকে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নাগাদ যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং টোল আদায়কারীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। বেলা ১১টা নাগাদ টোল আদায়ের কাউন্টার বৃদ্ধি করে ৮টি করা হয়।

টোল প্লাজার কর্মকর্তারা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রথমত শুক্রবার এত গাড়ির চাপ থাকবে তা ধারণার মধ্যে ছিল না। তাই কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। কাউন্টার বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে। তবে কবে নাগাদ ১০টির মধ্যে বাকি দুটি কাউন্টার বসানো যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলছে না।

গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার ভোর থেকে সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে টোল প্লাজায় টোল আদায় শুরু হয়। আগে পদ্মা সেতুর ঢাকার প্রান্তে তিনটি সেতুতে টোল দিতে হতো। এক্সপ্রেসওয়ের টোল চালুর পর বর্তমানে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের তিনটি স্থানে টোল দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ধলেশ্বরী, পদ্মা সেতু এবং ভাঙ্গার বগাইল টোল প্লাজা। এর মধ্যে পদ্মা সেতুতে প্রথম দিন কিছু বিশৃঙ্খলা হলেও বর্তমানে পদ্মা সেতু টোল প্লাজায় কোনো জট নেই।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী ৫৫ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক। পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার এই মহাসড়ক ব্যবহার করলে একটি বড় বাসকে টোল দিতে হবে ২০০ টাকা, মিনিবাস ১১০ টাকা, মাইক্রোবাস ৯০ টাকা, প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা ও মোটরসাইকেল ১০ টাকা। এছাড়া ট্রাকের ক্ষেত্রে ট্রেইলর ট্রাকের (সবচেয়ে বড় ট্রাক) টোল ধরা হয়েছে ৬৭৫ টাকা, ভারী ট্রাক ৪৪০ টাকা এবং মাঝারি আকারের ট্রাক ২২০ টাকা।

ভাঙ্গার বগাইল টোল প্লাজার ইনচার্জ ফারুক হোসেন বলেন, এখানে টোল আদায়ের ১০টি কাউন্টার রয়েছে। তবে প্রথমদিনে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা ফ্লাইওভারমুখী পয়েন্টে তিনটি কাউন্টার এবং বিপরীত দিকে পদ্মা সেতু অভিমুখী সড়কের একটি কাউন্টার দিয়ে টোল আদায় শুরু হয়।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামিদউদ্দিন আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তারা প্রথমে ৩টি কাউন্টার দিয়ে টোল আদায় শুরু করে। গাড়ির চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে কাউন্টারের সংখ্যা কম থাকার কারণে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। এ সময় কিছু বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আমরা মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। ছুটির দিন হওয়ায় গাড়ির চাপ বেশি। ভোর থেকেই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকা থেকে শত শত প্রাইভেট কার চলে আসার কারণে গাড়ির চাপ তৈরি হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের ভাঙ্গার টোল প্লাজার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু হোসেন শুক্রবার দুপুর ১২টায় বলেন, নতুন করে একাধিক বুথ চালু করায় যানজট কমেছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ভাঙ্গা টোলপ্লাজায় কথা হয় বরগুনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আজিজ আহমেদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আমরা ফেরি, লঞ্চ দিয়ে পদ্মা পার হয়েছি। এখন পদ্মা সেতু হয়েছে। দ্রুত ঢাকা যাওয়ার কথা। কিন্তু রাত থেকে টোল প্লজায় আটকে আছি কয়েক ঘণ্টা ধরে।

বরিশালগামী ট্রাকচালক হাসমতউল্লাহ (৪৬) বলেন, অনেকক্ষণ এখানে জ্যামে আটকে আছি। পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা টোল প্লাজায় এসে দুই কিলোমিটার পেছনে পড়ি। টোল প্লাজার কাছে আসতে ৪৫ মিনিট লেগেছে।

ঢাকা থেকে বরিশালগামী ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মো. তানভীর জামান (২৯) ভাঙ্গার টোল প্লাজার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে শুক্রবার দুপুরে বলেন, সকালে ভিড় হওয়ার কথা শুনেছিলাম। সেই ভিড় কিছুটা কমেছে। ২৫ মিনিটে আমরা টোল বুথের নাগাল পেয়েছি।

কেরানীগঞ্জ : টোল প্লাজার এই যানজটে আটকা পড়ায় অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। পটুয়াখালী ৯৬ ব্যাচ নামের একটি সংগঠনের কয়েকজন মিলে বাস ভাড়া করে পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছিলেন। তারাও আটকা পড়েন ধলেশ্বরীর টোলপ্লাজায়।

তারা বলছিলেন, যানজটের মূল কারণ হচ্ছে টোল আদায়ের দীর্ঘসূত্রতা। টোল আদায়ে দক্ষ জনবল ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ধলেশ্বরী টোল প্লাজার একটি বুথের টোল আদায়কারী তানভীর আহমেদ বলেন, পোস্তগোলা সেতু ও ধলেশ্বরী সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে এখন এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা হচ্ছে। এখন একটি প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসকে ১৩০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। আগের টোলের চেয়ে এক্সপ্রেসওয়ের টোল বেশি কেন এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করছেন। তাদের এটা বোঝাতে গিয়ে অনেক সময় বিলম্ব হচ্ছে।

সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আজ (গতকাল) প্রথম শুক্রবার। গাড়ির চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে ৯-১০ হাজার গাড়ি ধলেশ্বরী টোল প্লাজার ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। শুক্রবার তার দ্বিগুণ গাড়ি যাতায়াত করছে।