মাকে কেন গুলি করল ছেলে, সম্পত্তি নাকি অন্যকিছু?

জাতীয়

সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ছেলে মাইনুল তার মা জেসমিন আক্তারকে (৫০) গুলি করে হত্যা করেছে বলে মনে করছেন স্বজনেরা। তবে হত্যার পেছনে মাইনুলের বউ ও শাশুড়ির ইন্ধন আছে বলে দাবি করেছেন বোন নিপা। মাইনুলের বাবা শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারে কলহ শুরু হয় বলে জানা গেছে। একমাস আগে মারা যান মাইনুলের বাবা শামসুল আলম।

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির নেতা সদ্য প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তার দুই ছেলে, মাইনুল ও মাশফি। এর মধ্যে মাইনুল বড়। পরিবারের একমাত্র মেয়ে শায়লা শারমিন নিপা। ছোট ছেলে মাশফি বাবা মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।

নিহতের আত্মীয়-স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা শুরু হয়। এছাড়া মাইনুল কিছুদিন আগে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। এ নিয়েও মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল মাইনুলের।

আজ (মঙ্গলবার) সকালে মেয়ে শায়লা শারমিন নিপাকে নিয়ে ব্যাংকে যান জেসমিন আক্তার। মাইনুলকে না জানিয়ে বোনকে নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার কথা শুনতে পেয়ে দুপুরের দিকে মায়ের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন মাইনুল। এরই একপর্যায়ে মাকে গুলি করেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় মা জেসমিন আক্তারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জেসমিন আক্তারের মেয়ে শায়লা শারমিন নিপা বলেন, বাবা মারা গেছেন ৪০ দিনও হয়নি। তাই আমরা সম্পত্তি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনি। কিন্তু মাইনুলকে তার বউ ও শাশুড়ি সবসময় সম্পত্তির কথা বলত। তাদের কথা শুনে সম্পত্তির জন্য বিভিন্ন সময় মায়ের সঙ্গে ঝামেলা করত মাইনুল। তার বউ ও শাশুড়ি মিলেই আমার ভাইয়ের মাথা খারাপ করেছে। মূলত তাদের উস্কানিতেই মাইনুল আজ মাকে গুলি করে হত্যা করেছে।

জেসমিনের ভাই জামাল উদ্দিন বলেন, মাইনুল ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে সম্পত্তি নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝামেলা করত। আজকে মাইনু আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। আমি তার ফাঁসি চাই।

নিহত জেসমিনের আত্মীয় শাহাজাদা মিজান বলেন, মাইনুল মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে পরিবারের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেছিল সে। মূলত তখন থেকেই ঝামেলা শুরু হয়।

তিনি বলেন, জেসমিনের মেয়ে শায়লা শারমিন নিপাও অস্ট্রেলিয়া থাকেন। মাকে তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল।

চট্টগ্রামের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তাতে প্রাথমিকভাবে এটি পারিবারিক দ্বন্দ্বই মনে হচ্ছে। শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর থেকে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সেটার রেশ ধরেই আজ মা-ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে মাকে গুলি করে হত্যা করে মাইনুল।

তিনি বলেন, গুলি করার পরপরই মাইনুল পালিয়ে যান। তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। মাইনুলকে গ্রেপ্তার করার পর জানা যাবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি তিনি কোথায় পেয়েছেন।