আমরা আপনাদের আত্মীয়, আপনারাও আমাদের আত্মীয়

আন্তর্জাতিক

‘বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধনকে রক্তের বন্ধন বলা হয়। এই বন্ধন রক্তের চেয়েও অনেক বেশি। এই বন্ধন আত্মীয়তার, হৃদয়ের। ’

বাংলাদেশে ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে বিদায় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

ভারতীয় হাইকমিশনার আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে ঢাকা ছাড়বেন। তাঁর বিদায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের উদ্দেশ্যে ভারতীয় হাইকশিনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘জীবনে অনেক ধরনের সম্মান পাওয়ার সুযোগ আছে। স্পষ্টতই রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে অন্য দেশে এসে প্রতিনিধিত্ব করা যে কারো জন্য অনেক সম্মানের। আর সেই দেশটি যদি ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশ হয়, তবে সেই সম্মান দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করতে পারা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের গৌরবের বিষয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আমরা অনেক কথাই বলি। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি আমাদের নিজেদের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক। আমরা আপনাদের আত্মীয়। আর আপনারা আমাদের আত্মীয়। ’

ভারতীয় হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘আমরা আত্মীয় বলেই হয়তো একে অপরের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা কখনো কখনো অবাস্তব হয়। আমরা ভুলে যাই যে আমরা আত্মীয়, আমাদেরও একই চিন্তা আছে। অন্য দেশ বা অন্য দেশের লোকদের মতো স্পষ্টতই বিদেশি লোকদের সঙ্গে অধৈর্য হওয়া অনেক বেশি সহজ। তাই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সেই অর্থে সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। তবে এটি এমন একটি সম্পর্ক যা সবচেয়ে মৌলিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে হৃদয়ের সংযোগ আছে। আমরা প্রায়ই বলি বাংলাদেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু আসলে এটি রক্তের চেয়ে বেশি। আমরা আমাদের আত্নার বন্ধনে আবদ্ধ। ’

ভারতের হাইকমিশনার সবসময় সেই বন্ধন, সম্পর্কে বিশ্বাস রাখার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্ধুদের বলতে চাই যেন গ্লাসটি অর্ধেক ভরা আছে এমনটিই দেখুন। আমাদের অবশ্যই কিছু বিষয় আছে যা একসঙ্গে করতে হবে। আরো অনেক কিছু যা আমরা একসঙ্গে করতে চাই এবং করা উচিত।

বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘গত এক দশকে আমরা একসঙ্গে দুর্দান্ত কাজ করেছি। আমরা এটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই তা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব দেশীয় রাজনৈতিক দর্শন, রাজনীতি ইত্যাদির বিষয়। আর এটি অবশ্যই আমার কাজের নয়। আমরা যা করেছি তা কিভাবে উদযাপন করতে বেছে নেওয়া হয়েছে, তা আমাদের কাজ। তাই আমি আপনাদের সবাইকে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারির সাফল্য উদযাপনে আমার সঙ্গে যোগ দিতে অনুরোধ জানাই। ’

ভারতীয় হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই যারা ব্যবসায়, সাংস্কৃতিক সংযোগ বৃদ্ধিতে, একসঙ্গে সিনেমা তৈরি করতে, একে অপরের সম্পর্কে নিবন্ধ লিখতে কাজ করেছি, আমরা যারা সরকারে আছি, আমরা যারা আরো ভাল করার চেষ্টা এবং নিশ্চিত করার জন্য নীতি তৈরি করেছি, আমাদের প্রত্যেকে এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবদান রেখেছি। আমাদের সেই শক্তিটি বহন করতে হবে। ’

বিক্রম দোরাইস্বামী বাংলাদেশ থেকে নিজের বিদায়কে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে ট্রেন থেকে নেমে অন্য ট্রেনে উঠব এবং অন্য প্ল্যাটফর্মে চলে যাব। কিন্তু ট্রেন চলতেই থাকবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ট্রেনই সেরা। ’

ভারতীয় হাইকমিশনার সবার সুস্বাস্থ্য, সুখ, সাফল্য কামনা করেন।