বিদ্যুৎ নেই ৩ ঘণ্টা, ডাক্তার রোগী দেখলেন মোমবাতির আলোয়

বিদ্যুৎ নেই ৩ ঘণ্টা, ডাক্তার রোগী দেখলেন মোমবাতির আলোয়

দেশ জুড়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ

ডাক্তার দেখানোর জন্য সকাল সকাল জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) বহির্বিভাগে এসে টিকেট কাটার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাহের উদ্দিন; গত কিছুদিন ধরে তিনি পায়ের ব্যথায় ভুগছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই বলে কাউন্টারে লোক নেই। এভাবে চললো তিন ঘণ্টা। তিনি বললেন, “এই শরীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়ায়ে থাকতে হচ্ছে৷ গরমে জান বের হয়ে যাচ্ছে। কোনো কর্মকর্তাও নাই। মানুষজনের হাহাকার অবস্থা।”

তাহের উদ্দিনের মত আরও বহু রোগী ও তাদের স্বজনদের ভুগতে হয়েছে বুধবার সকালে। কারণ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এই সরকারি হাসপাতালের একটি ভবনে বিদ্যুৎ ছিল না। হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিদ্যুতের মিটার পুড়ে যাওয়ায় এ বিপত্তি। ওই সময়টায় আউটডোরে যে ডাক্তাররা ছিলেন, তাদের কেউ কেউ রোগী দেখেছেন মোমের আলোয়।

 

অন্য ভবনে বিদ্যুৎ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের এ সমস্যা পোহাতে হয়নি। ভুগতে হয়েছে মূলত বহির্বিভাগ ও টিকেট কাউন্টারে অপেক্ষায় থাকা রোগীদের। বিদ্যুৎ না থাকায় টিকেট কাউন্টারে ছিলেন না কেউ। ফলে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চাপ বেড়ে যায় অনেক। স্ক্র্যাচ নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিতু আক্তার। তার সঙ্গে এসেছিলেন বাবা আর দাদু। তাকে দাঁড় করিয়ে রেখে তারা গেছেন বাইরে। মিতু বলেন, “পা নিয়ে আর দাঁড়ায় থাকতে পারছি না। আব্বু আর দাদু আসছিল, তাদেরও পাই না। এমন অবস্থা কলও করতে পারছি না।” মামাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য এসএম জিৎ দাস হাসপাতালে এসেছেন সকাল ৭টার দিকে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত এই তরুণের কথায় ঝরল ক্ষোভ।

তিনি বলেন, “কারো কোনো গর্জ নাই। এটা শহরের হাসপাতাল, তারপরও যদি এমন হয়, তাহলে গ্রামের কী অবস্থা বোঝেন? এমন পরিস্থিতি মানা যায় না।” স্বামীর ভাঙা পায়ের এক্সরে করানোর জন্য হেমায়েতপুর থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মুন্নী বেগম। তিনি মঙ্গলবারও এসেছিলেন। কিন্তু সরকারি ছুটি থাকায় কাজটা হয়নি। “এখন তো কঠিন অবস্থায় পড়ে গেলাম। ৮টায় টিকেট দেওয়ার কথা, রিপোর্ট করে ১১টার দিকে ডাক্তার দেখাব। কারেন্ট নাই এখন টিকিট কাটতে কাটতেই যদি ডাক্তার চলে যায়, তাহলে আবার আগামীকাল আসতে হবে। গরীব মানুষ, এসে যদি ফিরেই গেলাম, তাহলে কী লাভ হল এখানে এসে!” চিকিৎসকদের কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, টেবিলে জ্বলতে মোমবাতি। তার মধ্যেই রোগী দেখার চেষ্টা করছেন তারা। একজন চিকিৎসক বললেন, “আমরা আপাতত ভর্তি আর ফলোআপ রোগী দেখছি।

 

টিকেট বন্ধ থাকায় নতুন রোগী তো দেখতে পারছি না, কাগজ ছাড়া তো ট্রিটমেন্ট লিখতে পারব না।” দীর্ঘক্ষণ বিদ্যৎ না থাকার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক তালুকদার সকাল ৯টার দিকে বিডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসপাতালের মিটার পুড়ে গেছে। আমাদের দুটো সার্কিট। পাশের সার্কিটটা বন্ধ রেখে, প্রশাসনিক ভবনের সার্টিক চালু রাখা হয়েছে। লাইনের কাজ চলছে।” সেই কাজ শেষে বিদ্যুৎ আসে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। তার কিছুক্ষণ পর আউটডোরের টিকেট কাউন্টারে টিকেট দেওয়া ‍শুরু হয়। বিপুল সংখ্যক রোগী আর স্বজন তখন সেখানে অপেক্ষায়।