ভবন নির্মাণ করতে জাহাঙ্গীরনগরে ৫৬টি গাছ কেটে ফেলল প্রশাসন

ভবন নির্মাণ করতে জাহাঙ্গীরনগরে ৫৬টি গাছ কেটে ফেলল প্রশাসন

জাতীয় বাংলাদেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য রাতের আঁধারে বিভিন্ন প্রজাতির ৫৬টি গাছ কেটে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সুন্দরবন নামে স্থানের গাছগুলো কাটা হয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সেখানে যান। সেখানে তাঁরা ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক ভেঙে দেন। এর পর বেলা দেড়টার দিকে আরেক দল শিক্ষার্থী যেখানে গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে নতুন ১১টি গাছ লাগিয়ে দেন।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন নামে স্থানে অর্ধশতাধিক কাটা গাছের গোড়া দেখা যায়। গাছের ছোট ছোট ডালপালা পড়ে আছে, তবে গাছগুলোর প্রধান অংশ সেখানে নেই।নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা হলে সেসব গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে গাছ কাটার পর কয়েক ঘণ্টা পার হলেও গাছগুলো এস্টেট কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

 

এ বিষয়ে এস্টেট কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তা শাখার এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছি, সেখানে আজ গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার কথা আইবিএ ইনস্টিটিউট থেকে জানানো হয়নি। কাটা গাছগুলো আমাদের এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’এ বিষয়ে আইবিএ পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো এস্টেট অফিসকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গাছগুলো ক্যাম্পাসেই থাকার কথা। তবে কোথায় রাখা হয়েছে তিনি জানেন না।এর আগে ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের একই স্থানে আইবিএর নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৩১ মে প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভবন, গাছ কাটার আয়োজন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে আইবিএ ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে ‘গাছ কাটা নিষেধ’ লেখাসংবলিত একটি ব্যানার গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তবে ব্যানার ঝোলানোর দুই দিন পর ব্যানারটি সরিয়ে ফেলা হয়। সে সময় ব্যানারটি রাতের আঁধারে প্রশাসন সরিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। হঠাৎ আজ ভোরে গাছগুলো ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে এবং কাটা গাছের প্রধান অংশ ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তথ্যমতে, ওই স্থানে প্রায় ১৫০ প্রজাতির গাছ আছে। এর মধ্যে বনখেজুর, বনজাম, ভুঁই ডালিম, বড়চাল্লি, ভুঁই ক্যাপসুল, ভুঁইচাপা, গান্ধী গজারি, পিরালু, বিরঙ্গী, অমলকুচি, মুচকন্দ ও বনজুঁই উল্লেখযোগ্য।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে অসাধারণ করেছে। এখানকার ভূমিরূপ, বৃক্ষশোভিত অঞ্চল, নিবিড় শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চর্চার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশে–বিদেশে সুনাম অর্জন করছে। মাস্টার প্ল্যান না মেনে যেখানে–সেখানে ভবন নির্মাণ করে বিগত সময়েও এখানে প্রকৃতি বিনাশকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কোনোভাবেই বুঝতে চান না যে প্রাণ–প্রকৃতি ধ্বংস করে যেখানে-সেখানে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা ভবন নির্মাণ করার বাস্তবতা এখানে একেবারেই নেই। তারপরও পরিকল্পনাহীনভাবে গাছ কেটে একের পর পর ভবন নির্মাণ করেই যাচ্ছে প্রশাসন। প্রাণ–প্রকৃতির দিকে না তাকিয়ে, মাস্টার প্ল্যান না মেনে খামখেয়ালিপূর্ণ এ ধরনের নির্মাণকাজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এখানে দুর্নীতির বিস্তারেও প্রকল্পগুলো প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে।

 

গতকাল গভীর রাতেও গোপনে প্রশাসন অসংখ্য গাছ কেটেছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নুরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।রাতের আঁধারে গাছ কাটা হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওখানে ভবন করার জন্য সাবেক উপাচার্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কার্যাদেশ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা গাছগুলো কেটেছেন। এখন তাঁদের যে সময় উপযুক্ত মনে হয়েছে, তাঁরা তা–ই করেছেন।