‘এভাবে আর চলতি পারি না’

‘এভাবে আর চলতি পারি না’

স্বাস্থ

আজ সোমবার সকাল ৯টা। রাজশাহী নগরের তালাইমারী মোড়। রাস্তার পাশে সারি সারি সাইকেল। তাতে বাঁধা আছে একটি ঢালি ও কোদাল। পাশেই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে অপেক্ষায় বসে আছেন শতকের কাছাকাছি মানুষ। সেখানে গিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই একজন বলে উঠলেন, ‘ভাই, কাজ লাইগব্যে। আসলে এখানে এসে দাঁড়ালে এভাবেই বলি। মন খারাপ কইরবেন না।’জেলার চারঘাট উপজেলার ইউসূফ এলাকা থেকে আসা জহুরুল ইসলাম এই কথা বলছিলেন। তিনি ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দিনমজুরির কাজের অপেক্ষায় ছিলেন তালাইমারী এলাকায়। পরে তাঁর সঙ্গে আরও কথা হলো। বললেন, ‘অবস্থা ভালো না ভাই। সাধারণ মানুষের কিছুই নাই। কাজও নাই।

 

হরতাল, মিছিল না হলে দেখা যায়, সাত দিনে তিন-চার দিন কাজ হয়। এভাবে আর চলতি পারি না, দেশের অবস্থাও ভালো না। এগুলো নিয়েও টেনশন করি। বাজারের জিনিসপত্রের দামও অনেক।’ জহুরুল সকাল সাড়ে ৯টার পর সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন কাজ না পেয়ে।শরিফুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘কাজ দুই দিন হলে, চার দিন হয় না। গত সপ্তাহে তিন দিন কাজ পেয়েছেন। ওই টাকায় সাত দিন চলা যায় না। চাল, ডাল, আলু সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। হরতাল অবরোধের কারণে মানুষজন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আরও চাপে পড়েছেন তাঁরা, যা আয় করছেন সবজি কিনতেই চলে যায়। এই অবস্থার মধ্যে দেশের পরিস্থিতি ভালো না হলে আরও বিপদ সামনে।

 

 

 

’বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফার অবরোধ চলছে। শ্রমজীবী মানুষের কাজের ক্ষেত্র কমে গেছে। অনেক উন্নয়ন কাজে ঢিলেঢালা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে বিপদে আছেন দিনমজুর মানুষেরা। তালাইমারী মোড়ের মতো নগরের বিনোদপুর, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমজীবীরা শ্রম বিক্রি করতে আসেন। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম থেকে কাকডাকা ভোরে শ্রমজীবী মানুষেরা আসেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁদের কেউ কাজ পান, কেউবা কাজ না পেয়ে চলে যান। ইদানীং কাজ না পেয়ে চলে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
নগরের বিনোদপুর এলাকায় কাজের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পবা উপজেলার চৌমুহনী বাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কাজকর্ম কমে গেছে। ১ মাসের মধ্যে এখন ২০ দিনও কাজ পাওয়া যায় না। ভোরের দিকে এসেছেন। কাজ না পেলে বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। গ্রামেও কাজ নেই। কাজ না পেলে আজকের সারাটা দিন মাটি।

 

 

একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. জনি নামে এক তরুণ। কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বছরের শেষ দিকে কাজ এমনিতেই কম হয়। কিন্তু এবার আরও কম। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। নির্মাণসামগ্রীসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে মানুষজন কাজ কমিয়েছে। আর কয়েক দিন ধরে হরতাল অবরোধে আরও কাজ কমেছে।নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর এলাকায় বেলা ১০টার পর গিয়ে কয়েকজন শ্রমিককে পাওয়া গেল। তাঁরা কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন। আবদুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত থাকবেন। পরে চলে যাবেন। গত দুই দিন ধরে এভাবেই একদুপুর বসে থেকে চলে যাচ্ছেন। মোহনপুর উপজেলা থেকে আসা আরেক শ্রমিক বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে চলাই কঠিন। আজ কাজ না করে বাড়ি ফিরলে কিস্তির টাকাটা দিতে পারব না।’