টাঙ্গাইলের সদর উপজেলায় ভাই-বোনের মৃ’ত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের মায়ের দাবি, শিশুদের বাবার সঙ্গে এক নারীর অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। অপরদিকে বাবার দাবি, তার দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের বলছে, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃ’ত্যুর রহস্য জানা যাবে।
শনিবার (২২ মে) দুপুরে সদর উপজেলার শ্রীফলিয়াটা গ্রামের পুকুর থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশু দুটি হলো, টাঙ্গাইল পৌরসভার পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ার আদম মণ্ডলের মেয়ে মোছা. আবিদা (১৪) ও ছেলে মো. রিফাত মণ্ডল (৮)।
শনিবার (২২ মে) বিকেলে সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটির দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট ও প্রস্থ ৫০ ফুট। পুকুরে মাঝখানে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পানির গভীরতা। পুকুরের পাড় ঘেঁষে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পানির গভীরতা। পুকুরের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে বসতবাড়ি। ওই এলাকার লোকজন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই পুকুরে গোসল করে।
স্থানীয়রা জানান, আদম মণ্ডলের সঙ্গে এক নারীর অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে শারীরিক নির্যাতন করতেন আদম মণ্ডল। এ নিয়ে দুই মাস আগে আদম মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। এরপর স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আদম মণ্ডল।
আদম মণ্ডলের ভাড়াটিয়া রেনু বেগমের ছেলের বিয়ে ছিল গত শুক্রবার (২১ মে)। এ উপলক্ষে দুইদিন আগে আদম মণ্ডল তার সন্তান আবিদা ও রিফাতকে নিয়ে ওই নারীর গ্রামের বাড়ি শ্রীফলিয়াটা গ্রামে যায়। পরে দুই সন্তানকে সেখানে রেখে চলে আসে আদম মণ্ডল।
শ্রীফলিয়াটা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, শনিবার ১১টা পর্যন্ত ওই শিশুদের রেনু বেগমের বাড়ির আশপাশে খেলতে দেখেছে। তারপর থেকে তাদের দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেনু বেগম শিশুদের সঙ্গে নিয়ে কাপড় ধোয়ার জন্য পুকুর পাড়ে যায়। ধোয়া শেষে রেনু কাপড় শুকাতে তার বাড়িতে চলে যায়। পুনরায় এসে শিশুদের না পেয়ে পাশের বাজারে খোঁজ করে। সেখানেও না পেয়ে আবার পুকুর পাড়ে গিয়ে শিশুদের জুতা দেখে আশপাশের লোকজন ডেকে পানিতে নামিয়ে দিয়ে খোঁজ করে।
ওই গ্রামের সবুর মিয়া বলেন, দুপুর ১২টার দিকে হৈ চৈ শুনে পুকুর পাড়ে গিয়ে রেনুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৭/৮ জন পানিতে নেমে শিশুদের খুঁজতে থাকে। পরে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
লাশ উদ্ধারের পর শিশু দুটির স্বজনরা এসে রেনু বেগমকে মারধর করে। এরপর থেকে রেনু বেগমকে তার বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না।
ফাতেমা বেগমের বড় ভাই আবু সুফিয়ান বলেন, ১৮ বছর আগে আদম মণ্ডলের সঙ্গে তার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে আদম ভালো আচরণ করেছে। গত দুই বছর ধরে ভাড়াটিয়া রেনু বেগমের সঙ্গে আদমের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো আদম মণ্ডল। এক পর্যায়ে তার বাড়ি থেকে স্ত্রীকে বের করে দেয়।
শিশুদের বাবা আদম মণ্ডল জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রেনু বেগম তাকে মোবাইল ফোনে জানায় ছেলে-মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তিনি দুপুরে বাঘিল বাজারের এক ফার্মেমিতে গিয়ে তার ছেলে ও মেয়ের লাশ দেখতে পায়। পরিকল্পিতভাবে তার ছেলে ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদম মণ্ডল দাবি করেন।
দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাভলু হোসেন লাভু বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুকুল মিয়া জানান, প্রাথমিক সুরতহালে শিশু দুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের পর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।