যে গ্রামে এখনো ঢুকতে পারেনি করোনা

আন্তর্জাতিক প্রবাস স্বাস্থ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বেসামাল ভারত। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে দেশটির অনেক রাজ্য। কী করে সংক্রমণের তীব্রতাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তিত ভারতের প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে ভারত তো বটেই, উপমহাদেশের তিন দেশের জন্যই কার্যত ‘মডেল’ হয়ে উঠতে পারে ভারতের ওড়িষা রাজ্যের গঞ্জম জেলার করনজারা গ্রাম।

ওড়িষার গঞ্জম জেলার দানাপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত করনজারা গ্রামে সব মিলিয়ে ২৬১ টি পরিবারের বাস। গ্রামের মোট জনসংখ্যা ১ হাজার ২৩৪ জন। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ভারতে গত বছর করোনা মহমারি শুরু পর থেকে সাম্প্রতিক দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটির অধিকাংশ রাজ্য তছনছ হয়ে গেলেও করনজারা গ্রামে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি।

প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক, মহামারির কবল থেকে যেখানে কোনও অঞ্চল রেহাই পায়নি, সেখানে একটা গোটা গ্রাম কীভাবে এখনও নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে? সত্যিই কি এই গ্রামে এখনও একটিও সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি?

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত জানুয়ারিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামের ৩২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। ওই ৩২ জনেরই ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।

 

ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাসিন্দারা খুব ভাল করে কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন। শিশু থেকে বয়স্ক, পুরুষ থেকে মহিলা সকলেই মাস্ক পরে থাকেন বাইরে বের হলে। সেই সঙ্গে কঠোর ভাবে মেনে চলেন সামাজিক দূরত্ব। এবং বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার আগে হাত-পা স্যানিটাইজ করেন এবং সর্বোপরি, খুব প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের কেউ বাইরে অযথা বের হন না।’

 

তিনি আরও জানান, এই গ্রামে মূলত জেলেদের বাস। শিক্ষা সে ভাবে পৌঁছাতে পারেনি গ্রামে। গরিব পরিবারগুলোর কাছে টেলিভিশন বা খবরের কাগজও নেই। তাই প্রথম থেকেই প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার করে কোভিড নিয়ে গ্রামবাসীদের সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছিল।

পাশাপাশি উঠে এসেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গও। করনজারা গ্রামেরও কিছু যুবক মহারাষ্ট্রসহ কয়েকটি রাজ্যে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে অনেকেই লকডাউনের সময় গ্রামে ফিরে আসেননি। যারা ফিরেছিলেন, তারাও গ্রামে প্রবেশের আগে ১৪ দিন নিজেদের কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিলেন। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২ সপ্তাহ থাকার পরে তারা পেয়েছিলেন গ্রামে প্রবেশাধিকার।

এমনকি সংক্রমণ যাতে না ছড়িয়ে পড়ে তাই গত বছর থেকেই গ্রামে কোনও বিয়ের অনুষ্ঠানও হয়নি। গ্রামের তরুণরা রোজ নিয়ম করে গ্রামের রাস্তাঘাট পরিষ্কার করেন বলে জানিয়েছেন বিজয় কুলাঞ্জে।