না’ বলাটা জানতে হবে: আফরান নিশো

বিনোদন

প্রায় দুই মাস পর কাজে ফিরেছেন ছোট পর্দার শীর্ষ অভিনেতা আফরান নিশো। অনেকটা সময় পর কাজে ফেরাতে ইতিমধ্যেই হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছে নাটকের এ মধ্যমণিকে নিয়ে। এবার ঈদে নতুন কোনো কাজে দেখা না গেলেও পুরনো কাজ দিয়েই আলোচনায় ছিলেন তিনি। প্রচারিত হওয়া ৭টি নাটকের মধ্যে ‘রাজা’, ‘তাকে ভালোবাসা বলে’, ‘মেরুন’, ‘নামকরণ’, ‘আবার ভালোবাসার সাধ জাগে’ কাজগুলো দর্শকমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

এদিকে নাটকের এ তারকাভিনেতা ইতিমধ্যেই গড়েছেন আরও এক নতুন রেকর্ড। নাট্যাভিনেতাদের মধ্যে প্রথম কোনো তারকা ২ কোটি ভিউয়ের হ্যাট্রিক গড়েছেন, ছুঁয়েছেন নতুন মাইলফলক। সম্প্রতি এক আড্ডায় কথা হয় তার সঙ্গে। কাজ, ব্যস্ততা; সবকিছু নিয়েই কথা বলেন ভার্সেটাইল এ অভিনেতা।

দীর্ঘদিন পর কাজে ফেরা প্রসঙ্গে আফরান নিশো বলেন, ‘মোটামুটি অনেকদিন বাসায় ছিলাম। ঈদেও কাজ করা হয়নি। খুব সুন্দর করে প্ল্যান করে রেখেছিলাম যার কিছুই হয়নি। এবার দেখি সেই প্ল্যানটাকে কতুটুকু, কীভাবে আগানো যায় সামনে।’

ঈদের কাজগুলো থেকে দর্শক সাড়া পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হাতে কিছু কাজ ছিলো যেগুলো আগের করা। সেগুলো আবার খুব বেশি আগেরও না। কয়েকটা কাজ প্রচার হয়েছে। তারমধ্যে প্রতিটা কাজের জন্যই ভালো সাড়া পেয়েছি। দর্শকদের রেসপন্স এবং

গ্রহণযোগ্যতা দুটোই ভালো পেয়েছি। দর্শকরা আমাকে ভালবাসে, তাদের এই গ্রহণযোগ্যতাটাই আমাকে সামনে এগিয়ে দেয়। সবসময় যে মাঠে থেকেই গোল করতে হবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। মাঠের বাইরে থেকেও অনেক সময় গোল করা যায়। সবকিছুর ভিড়ে ভাগ্যটাও সুপ্রসন্য থাকতে হয়। ভালো কাজ হলে সেটা দর্শক দেখবেই।’

এই সময়টাতে কাজ করতে না পারার জন্য কোনো আক্ষেপ রয়েছে কী? নিশো বলেন, ‘আক্ষেপটা তখন হবে যখন আমি আর অভিনয় করবো না বা করতে পারবো না তখন। তার আগ পর্যন্ত আমাকে ফাইট করেই যেতে হবে। আমি যদি এক বেলা শুটিং করতে না পারি, বেঁচে থাকলে হয়তো সেই সময়গুলো উৎরানো যাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, তার আগে আমাকে বাঁচতে হবে।’

আমি সবসময়ই বলি, মার্চ মাসের সাথে বাঙ্গালীদের একটা যুদ্ধ আছে, সেই যুদ্ধটা আমি করতে চাই। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ওই বিষয়টা আমি এটার সাথে মিলাই। গত বছর এবং এবছর মার্চ মাসে কিন্তু কাজ করতে পারিনি। একজন

পারফর্মার হিসেবে আমি যে অবস্থানে আছি, অবশ্যই কাজ প্রধান একটা জীবন আমার। যদি সাময়িক কাজ স্থগিত থাকে তাহলে জীবন, জীবিকা, খ্যাতি, ক্যারিয়ার- সবকিছুতেই কিন্তু একটা ইফেক্ট পড়ে। যখন কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে সেটা ফলোআপ করা খুব সহজ, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সেটা ফলোআপ করা খুব কঠিন। যেমন গত

বছর আমাদের কমিউনিটি থেকে শুটিং বন্ধের নির্দেশ ছিলো, কিন্তু এবার ছিলো না। যখন সবাই কাজ করে আর একজন বাসায় বসে থাকে অর্থাৎ কাজ করে না; তখন সেটা কিন্তু অনেক বেশি কষ্টের। এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও খুব বেশি কঠিন। নিজের জীবন, পরিবার সবকিছুর কথা চিন্তা করেই আমাকে বাসায় বসে থাকতে হয়। আমিও তো মানুষ, অভিনয়টা আমার পেশা, অভিনয় করেই আমাকে খেতে হয়।

কেউ বলুক আর না বলুক, এখানে কিন্তু একটা দৌড় প্রতিযোগিতা আছে। ঈদকে ঘিরে টিভি চ্যানেল কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা বিশাল আয়োজন থাকে। এবার সেই আয়োজনে আমি নেই। আমার

পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। আমার পরিবারের ছেলে আছে, স্ত্রী আছে, মা আছে। তাদের কথা চিন্তা করে আমি সবাইকে ‘না’ করে দিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে ‘না’ বলাটা জানতে হবে।

এটা না করে যদি আমি আমার পরিবারকে সাফারার করি, সেটা তো ঠিক হবে না। পরিবার, সরকারের নির্দেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা সবকিছু চিন্তা করেই এই সিন্ধান্ত নিই যে কাজ করবো না।’

তবে ঈদের সপ্তাহখানেক আগে দেশে করোনার পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হলেও আমি কাজ করিনি। এর কারণ হচ্ছে, ওই সময়ে কাজ করলে গল্পগুলোকে গৃহবন্দি করা হতো। এবার ঈদ নিয়ে আমার বিশাল বড় একটা প্ল্যান ছিলো। ভালোবাসা দিবসের কাজগুলো শেষ করেই ২০/২৫ দিন বাসায় ছিলাম। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে ঈদের জন্য কাজে

নামার প্ল্যান করি। এই সময়টাতে সুন্দর সুন্দর কিছু ভালো গল্প নিয়ে, গুছিয়ে কাজে নামার প্ল্যান করি। সেই নামাটা আর হয়নি। একজন ফ্রন্টলাইনার হিসেবে আমি আমার জায়গা থেকে একথাটাই বলতে চেয়েছি যে, ‘না’ বলাটা জানতে হবে। নিজের সিদ্ধান্তটা জানানোর ক্ষমতাটা রাখা উচিত। আমি দেখেছি যে। পজেটিভ দিক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে দিন শেষে সেটা আসলে সঠিকই হয়।’

‘আমার ক্যারিয়ার ২০ বছর পার করেছে। আমি অনেক কষ্ট করে উঠে আসা মানুষ। আমি এই দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছুই দেখেছি, বুঝেছি, ভেবেছি; নিজে একটা সিদ্ধান্ত জানানোর পর্যায়ে এসেছি। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি, অভিনয়টাকে আয়ত্ত করার জন্য অনেক অনেক কষ্ট করেছি। নিজেকে ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি

। আর হ্যাঁ, আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ইনসিকিউরড ফিল করিনা। কারণ, আমি যেটাই করি খুব ভেবে চিন্তে তারপর করি। আমি সবসময় আলোচনা করতে খুব পছন্দ করি। আমি যখন কোথাও যাই আমার বন্ধু হোক, কলিগ হোক বা সিনিয়র হোক; সবার সাথেই কাজ নিয়ে আলোচনা করি। সবার সঙ্গে কথা বলেই একটা সম্মিলিত প্রয়াশ ঘটানোর চেষ্টা করি।’ যোগ করেন নিশো।

ছোট পর্দার দুই সুপারস্টার বলা হয় আফরান নিশো ও জিয়াউল ফারুক অপূর্বকে। দুজনেই ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করছেন এখন। সহকর্মীর বাইরেও খুবই ভালো বন্ধু আপনারা, এ কথা সবাই জানে। আপনাদের দুজনের বন্ধুত্ব বজায় রাখা ও কাজ করতে

গিয়ে কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে হয় কি? আফরান নিশোর জবাব, ‘আমরা দুজনই খুব ভালো বন্ধু, আবার ভাইও। একই মায়ের পেটের না হলেও আমরা দুই ভাই। কাজ করতে এসে যে অপূর্বর সাথে আমার বন্ধুত্ব, এমন কিন্তু না। আমরা আরও অনেক আগেই থেকেই বন্ধু। আর হ্যাঁ, একই জায়গায় দুজন কাজ করতে গেলে তো একটা

প্রতিদ্বন্দ্বীতার পরিবেশ তৈরি হয়ই। ইন্ডাস্ট্রিতে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবেই, এটাই স্বাভাবিক। এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এটা যে শুধু আমার বন্ধু অপূর্বর সাথেই এমন কিন্তু না, এখানে আরও যারা মেইন প্রটাগনিস্ট হিসেবে কাজ করে তাদের সঙ্গেও এটা থাকে, আর থাকতেই হবে। এটা না থাকলেও কাজের মাত্রা, ধরণ, বিশালতা তৈরি হবে না কখনো। তার জন্য অবশ্যই একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার দরকার আছে।

এটা শুধু বন্ধুর ক্ষেত্রেই না। একই জায়গায় যদি দুই ভাইও কাজ করে তাদের মধ্যেও কিন্তু সে প্রতিযোগিতাটা থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। একজন ফার্স্ট হবে, আরেকজন সেকেন্ড। একই প্রফেশনে যখন দুজন নায়ক কাজ করবে,

তারা যতই ক্লোজ বন্ধু হোক না কেনো; তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি করে দেয় ভক্তরা। এটা সবার ক্ষেত্রেই। আর কাজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার অবশ্যই দরকার আছে। নাহলে মনে হবে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মতো।

ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মধ্যে কোনো মজা নেই। বন্ধুত্বের জায়গায় বন্ধুত্ব, কাজের জায়গায় কাজ। অপূর্বর কাজের জনরা আলাদা, আমারও আলাদা। অপূর্ব রোমান্টিক জনরা পছন্দ করে। আমি একটু ভিন্নভাবে পারফর্ম করতে পছন্দ করি। আমাদের দুজনের ফিলোসপিও আলাদা। কেউ যদি মনে করে আমরা দুজন একই রকম কাজ করি তাহলে ভুল। আমাদের দুজনের ফিলোসপিতে একটু হলেও মতভেদ আছে।

তবে আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই, আমরা দুজন বন্ধু একই প্রফেশনে একদম ফ্রন্টলাইনে অবস্থান করছি। এটা একটা সৌভাগ্য। এমনো কিন্তু হতে পারতো যে, একজন বন্ধু অনেক পিছনে পরে আছে আবার আরেকজন একদম সামনে! তখন কিন্তু কষ্টটাও বেশি লাগতো। আমাদের এই বন্ধুত্ব সারাজীবন অটুট থাকুক এবং এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের দুজনের অবস্থানও একই থাকুক, এটাই কামনা করি সবসময়।

আমাদের দুজনের জনরা আলাদা হলেও দুজন একসঙ্গে কাজ করেছি ‘দ্বিতীয় কৈশোর’ ওয়েব ফিল্মে। এখানে তাহসানও ছিলো। যারা কাজটি দেখেনি তাদেরকে বলবো দেখার জন্য। তাহলে বুঝতে

পারবে যে, একই স্ক্রিণে আমরা কীভাবে কাজ করি! এখনো কিন্তু অনেক প্রস্তাব আসে আমাদের দুজনের কাছে, একসাথে কাজ করার জন্য। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা তো খুব ছোট, একসাথে একটা কাজ করলে অনেক আবদার চলে আসে। তবে এটুক বলবো, আবারো দেখা যাবে একসাথে।’