টাঙ্গাইল কোর্ট চত্বরে ভুয়া কাজির দৌরাত্ম্য, বাড়ছে বাল্যবিয়ে

আইন-আদালত ঢাকা দুর্নীতি দেশ জুড়ে নারী ও শিশু

টাঙ্গাইল কোর্ট চত্বর এলাকায় বেড়েছে ভুয়া কাজির দৌরাত্ম্য। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় দেদারছে চলছে বিবাহ রেজিস্ট্রি ও তালাক নিবন্ধন। একশ্রেণির দালাল ও এসব ভুয়া কাজি নিজেরাই সিল তৈরি করে কাবিননামার নকল বইয়ে বিবাহের রেজিস্ট্রি করছেন। চক্রটি অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিবন্ধনপ্রাপ্ত বৈধ কাজিরা।

টাঙ্গাইল জেলা সদর কোর্ট চত্বর পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকাভুক্ত মুসলিম বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন কাজি এম. এ ছামাদ খোশনবীশ। তিনি বলেন, চার লাখ টাকা পর্যন্ত কাবিননামার সরকারি ফি সাড়ে ১২০০ টাকা। এরপর প্রতি লাখে একশ করে বাড়বে।

অভিযোগে জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার এ ওয়ার্ডের আদালত চত্বরে কাজি পরিচয়ে বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন করছেন শাহীন কাজী, মো. কাওছার, সাইফুল্লা কাজি, রুহুল আমিন, আকরাম, হানিফ মিয়া ও রাসেল নামের কয়েকজন। কোর্ট চত্বরে কাজ করা এই কাজিদের মধ্যে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি বলে দাবি করেন শাহীন কাজী।

 

 

এছাড়া মধুপুর উপজেলার কাজি রুহুল আমিন, লাইসেন্স বাতিল হওয়া কাজি সাইফুল্লা, তার অফিস সহকারী মো. কাওছার ও আকরাম, পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকাভুক্ত কাজি এম এ ছামাদ খোশনবীশের অফিস সহকারী হানিফ মিয়া, আদালতে কর্মরত মুহুরি রাসেল ও লতিফ কাজি পরিচয় দিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রি ও তালাক নিবন্ধন কার্যক্রম করছেন।

 

 

কোর্ট চত্বরে চলছে ভুয়া জন্মসনদ, নকল কাবিননামা আর জাল সিল-স্বাক্ষরে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে প্রাপ্তবয়স্ক বানিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে।

এর সুযোগ নিচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক, ঘর পালানো প্রেমিক-প্রেমিকা ও পরকীয়া প্রেমে আসক্তরা। এসব কাজি তাদের প্রয়োজনে নকল কাবিননামা, তালাকনামা ও বয়স প্রমাণের এফিডেভিটের ঘোষণাও দিচ্ছেন। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন আতঙ্কে রয়েছেন তেমনি পরকীয়ার বলি হচ্ছে প্রবাসীদের সংসার।

 

টাঙ্গাইল পৌর শহরের বাজিতপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার মেয়ে সম্প্রতি আদালত চত্বরে গিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। মেয়ের এ কাজে আমার পরিবারের মধ্যে চরম অশান্তি বিরাজ করছে।

 

ছদ্মবেশে কথা হয় কোর্ট চত্বরে কাজ করা হানিফ কাজির সঙ্গে। তিনি সাড়ে ১২০০ টাকায় দুই লাখ টাকার বিবাহ রেজিস্ট্রির কাবিন করে দেয়ার কথা জানান।

 

 

পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি দাবি করা শাহীন বলেন, কিছুদিন আগে আমি ওই অফিসে কাজ করতাম।
টাঙ্গাইল সদরের কাজি মো. রেজাউল করিম খান রুমী, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি হযরত আলীসহ কয়েকজনের অভিযোগ, ভুয়া এ সব কাজির বিরুদ্ধে জেলা রেজিস্ট্রারসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রার মাহফুজুর রহমান বলেন, নিবন্ধিত কাজি ব্যতীত বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। ভুয়া এ কাজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককেও অবগত করা হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, জেলার কাজিদের তালিকা অনুযায়ী ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি এম এ ছামাদ খোশনবীশ। এ ওয়ার্ডের নিয়োগপ্রাপ্ত কাজি ব্যতীত অন্যান্য কাজির বিয়ে, তালাক নিবন্ধন বেআইনি।