কেন কিটো ডায়েট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ?

স্বাস্থ

দ্রুত ওজন কমাতে কিটোজেনিক ডায়েট বা কিটো ডায়েট একটি ট্রেন্ড। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এই ডায়েট নিরাপদ নয়।
যারা এই ডায়েটের উপকারিতা প্রচারে ব্যস্ত তারা বলছেন এটা শরীরের প্রাকৃতিক চর্বি ঝরানোর প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনেই অনেক ওজন কমাতে সক্ষম। এই ডায়েটের প্রবক্তাদের মতে এটা একজন মানুষের ওজন খুব দ্রুত কমাতে পারে এবং তাকে দেয় অনেক বেশী শক্তি।

রোমের স্যাপিয়েনযা ইউনিভার্সিটির সার্জারি বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ডক্টর জিয়ানফ্রাঙ্কো ক্যাপেলোর মতে কিটো ডায়েট খুবই কার্যকর এবং তার গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন যে, ১৯,০০০ এর বেশী মানুষ তার ডায়েট অনুসরণ করে খুব দ্রুত বেশী মাত্রায় ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন। সামান্য কিছু মানুষের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কিন্তু কিটো বিরোধীদের মতে এটা ওজন কমানোর একটি অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি এবং মারাত্মক ক্ষতিকর।


কিটোসিস কি?
কিটো ডায়েটের বৈশিষ্ট হচ্ছে এতে কোন শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট নেই বা থাকলেও তার পরিমাণ খুবই কম।
আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবে শর্করাকে শক্তিতে রূপান্তর করে। কিন্তু শরীরে শর্করা কমে গেলে রক্তের ব্লাড সুগার কমে যায় ফলে শরীর শর্করার পরিবর্তে চর্বিকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। এই অবস্থাকে বলা হয় কিটোসিস (Ketosis)।
কিটোসিসকে বলা যায় কিটোএসিডোসিস-এর হালকা রূপ। কিটোএসিডোসিস টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে এবং এই কিটোএসিডোসিস ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশীরভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী।

কিটো ডায়েট কেন ক্ষতিকর?

সমালোচকদের মতে কিটো ডায়েট সাধারণতঃ স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করে এবং এটা অস্বাস্থ্যকর। তাদের মতে যে ওজন কমে সেটা শরীর থেকে পানি কমে যাওয়ার ফলে হয়।

যে কোন ডায়েটের মত কিটো ডায়েট অনুসরণের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
কিটো ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কিটো ডায়েট অনুসরণের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এসব সমস্যা নিয়ে আজকের লেখা।

১। মাথা ব্যথা
আপনার খাদ্য গ্রহণের নিয়ম পরিবর্তনের ফলে মাথা ব্যথা হতে পারে। এটা শরীরের পটাশিয়ামের অভাবের কারণে হয়। তাছাড়া আপনার যে সময় উপোস শুরু করা দরকার তার আগেই উপোস শুরু করলে এ সমস্যা দেখা দেয়।
কিটো ব্রেকফাস্ট

২। পালপিটিশান
পটাশিয়ামের ঘাটতিতে এ সমস্যা দেখা দেয়। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয় এই সমস্যা দূর করতে পারে। যেমন ডাবের পানি, পালং শাক, ব্রকলি, কাঠ বাদাম, আভোকাডো ইত্যাদি।

৩। দুর্বলতা
সোডিয়ামের অভাবে এই অবস্থা হয়। পানির সাথে লবন মিশিয়ে খেলে সোডিয়ামের ঘাটতি দূর হবে।

৪। মুখে দুর্গন্ধ
কিটো ডায়েটে যে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনি খাবেন তা সঠিকভাবে হজম হয় না, ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। প্রোটিন খাবারের সাথে এপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা দূর হতে পারে।

৫। মাথা ঘোরানো
শর্করা ও সোডিয়ামের অভাবে এই সমস্যা হয়। এর জন্য লবন পানি পান করা উচিৎ।

৬। ক্ষুধা লাগা
শরীরে ফ্যাট কমে যাওয়ার ঘন ঘন ক্ষুধা লাগবে। এর জন্য কফি পানি করুন।

৭। চুলকানি ও র‍্যাশ
কিটো ডায়েটে চর্বি বার্ন হলে এতে থাকা টক্সিক পদার্থ বের হয় যা রক্তে ঢুকে যায় এবং চুলকানির সৃষ্টি করে।

৮। চুল পড়া
কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশী খাওয়া হয়। এতে শরীরে মেটাবলিযমের পরিবর্তন আসে যার ফলে চুল পড়ে যায়।

৯। কিটো ফ্লু
এর ফলে মাথা ব্যথা হয়, কাজে মন বসে না এবং ক্লান্তি লাগে।

১০। ডায়ারিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য
কিটো ডায়েটে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এই সমস্যা দূর করতে বেশী বেশী পানি পান করুন এবং ডায়েটের সাথে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন আটা, মসুর ডাল, মুগ ডাল ইত্যাদি যোগ করুন।

১১। ব্যায়ামে শক্তি কম
ব্যায়ামের জন্য দরকার অধিক পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার। যেহেতু কিটো ডায়েটে কোন শর্করা নেই তাই ব্যায়াম করা কমাতে হবে।