নতুন করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সূচনা যেখান থেকে !

আন্তর্জাতিক

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেতের নেতৃত্বে ইসরায়েলে নতুন সরকার গঠনের দুই দিনের মাথায় আবারও গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত মাসে গাজায় টানা ১১ দিন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটে। তবে ওই চুক্তির পর তিন সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবার এই হামলার ঘটনা ওই অঞ্চলে শান্তি আশা ফিকে হয়েছে।

নাফতালি বেনেত উগ্র–জাতীয়তাবাদী দল ইয়েমিনা পার্টির নেতা। এক সময় তিনি পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে কাজ করা ইসরায়েলিদের সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে তার এই সরকারে রয়েছেন বামপন্থী, মধ্যপন্থী এমনকি ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের দলের প্রতিনিধিরা। তারপরেও কেন এই হামলা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিবিসি, আল–জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নতুন করে এই উত্তেজনার শুরু মঙ্গলবার ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের জেরুজালেম দিবসের ‘ফ্ল্যাগ মার্চকে’ কেন্দ্র করে।

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েলের পূর্ব জেরুজালেম দখলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতিবছর জেরুজালেম দিবস ফ্ল্যাগ মার্চ করেন ইহুদিরা। তাঁদের এই শোভাযাত্রাকে উসকানি হিসেবে দেখেন ফিলিস্তিনিরা।

এই শোভাযাত্রা উপলক্ষে মঙ্গলবার জেরুজালেমের দামেস্ক গেটের সামনে জড়ো হন কয়েকশ ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদী। তাদের অধিকাংশই ছিলেন তরুণ। তারা নাচ, গান ও ইসরায়েলি পতাকা উড়িয়ে উৎসব করেন। পরে ইহুদিদের অন্যতম পবিত্র স্থান ওয়েস্টার্ন ওয়ালে পৌঁছানোর জন্য আরেকটি ফটক দিয়ে ঢোকেন তারা।

এই শোভাযাত্রার জন্য রাস্তা খালি করতে ইসরায়েলি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহিংস আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।

ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, এ সময় ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

অপরদিকে ইসরায়েলি পুলিশ বলছে, সংঘর্ষে দুইজন কর্মকর্তা সামান্য আহত হয়েছেন এবং ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইসরায়েলের মধ্যপন্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ এই আয়োজনের প্রশংসা করলেও শোভাযাত্রায় একটি গ্রুপের বর্ণবাদী স্লোগান দেওয়ার সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, সেখানে চরমপন্থীরা রয়েছে যারা ইসরায়েলের পতাকার মাধ্যমে ঘৃণা ও বর্ণবাদের প্রতিনিধিত্ব করেছে, যা জঘন্য ও সহ্য করার মতো নয়। এটা বোধগম্য নয় যে, কীভাবে একজন ইসরায়েলি পতাকা হাতে নিয়ে ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দিতে পারেন।

এই পতাকা শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল ১০ মে। তবে ওই দিন গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস রকেট হামলা শুরু করার পর শোভাযাত্রাটি পণ্ড হয়ে যায়। ওই রকেট হামলার পর গাজায় টানা ১১ দিন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

হামাসের সঙ্গে ইসলায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর পুনরায় জেরুজালেম দিবসের শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার এই শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে ইসরায়েলি পুলিশ শোভাযাত্রার রুট নিয়ে আপত্তি তুললে তা আবার স্থগিত করা হয়।

পরে দামেস্ক গেট এড়িয়ে শোভাযাত্রার রুট প্রস্তাব করলে অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের নতুন সরকার। তবে এই সরকারে থাকা ইসরায়েলি বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের দল আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টি শোভাযাত্রা বাতিলের কথা বলেছিল।

ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীও এই শোভাযাত্রার ‘বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া’ হবে বলে সতর্ক করেছিলেন।

এই শোভাযাত্রা ও সংহিসতার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার গ্যাসীয় বেলুন ছোড়ে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস। তাতে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ২০টির মতো জায়গায় আগুন লেগে যায়। এরপর গাজায় আবার বিমান থেকে বোমা ফেলে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, হামাস নিয়ন্ত্রিত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা।

এই হামলায় উভয়পক্ষের কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বুধবার সকালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।