লকডাউন আর শাটডাউনের মধ্যে কী পার্থক্য

খুলনা চট্টগ্রাম ঢাকা দেশ জুড়ে বরিশাল ময়মনসিংহ রংপুর রাজশাহী সিলেট

আচ্ছা লকডাউন আর শাটডাউনের মধ্যে কী পার্থক্য? বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে রাজধানীর নিউমার্কেটের ভেতর চায়ের দোকানে আড্ডারত কয়েক যুবকের একজন বন্ধুদের কাছে এমন প্রশ্ন করেন। এ নিয়ে মিনিট কয়েক চায়ের কাপে রীতিমতো ঝড় ওঠে। তাদের কেউ বলেন শাটডাউন মানে সারাদেশে যান

ও জনচলাচল, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট পুরোপুরি বন্ধ। কেউ আবার বলেন, কেন লকডাউনেও তো এমন নির্দেশনাই ছিল। তবে কি শাটডাউন শুধু শব্দগত পরিবর্তন? নাকি সত্যিকার অর্থেই করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে?

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সারাদেশে ১৪ দিনের পূর্ণাঙ্গ শাটডাউনের পরামর্শ দেয়ার ‍খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান

থেকে শুরু করে ছোট-বড় শপিংমল-মার্কেট বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। লকডাউন আর শাটডাউনের মধ্যে পাথ্যর্ক কী জানতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা লেখালেখি হচ্ছে।

একাধিক রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃ;ত্যু

ক্রমশ বাড়ছে। যে কোনো দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে এবং ধারাবাহিক তিন থেকে চার সপ্তাহ একই হারে শনাক্তের হার ধরে রাখতে হয়। বর্তমানে দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর হার

২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল ২৩ ও আজ ২৪ জুন দুই দিনে ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

তারা বলেন, ‌‘এখনও দেশে লকডাউন চলছে। চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে এ বিষয়ে গত ১৬ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে।’

চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি

করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়।

কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সাত জেলায় পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ও ঢাকার সঙ্গে যান ও জনচলাচল বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও মানুষ নানা উপায়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছুটছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের কাছে লকডাউন ও শাটডাউনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে কি-না জানতে

চাইলে তিনি বলেন, ‌‘বর্তমানে সংক্রমণ প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে শাটডাউন শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের মানুষ লকডাউন শব্দটিকে মূল্যায়ন করে বিধিনিষেধ মানতে চায় না। পরামর্শক কমিটি চলমান বিধিনিষেধ কার্যকর করতে কোথায় কী করতে হবে তা সুনির্দিষ্ট করে সম্পূর্ণ শাটডাউন

অর্থাৎ বিধিনিষেধের আওতাধীন এলাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে-এমন নির্দেশনা দেবে। যদিওবা খোলা থাকে তবে নির্দেশনা শতভাগ মেনে খোলা রাখতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন বলা হয়েছে

রেস্টুরেন্টে বসে খেতে পারবেন না, কিনে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে রেস্টুরেন্টে ক্রেতা বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। শাটডাউন শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করাকেই বোঝানো হয়েছে।’

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সারাদেশে ১৪ দিনের পূর্ণ শাটডাউনের সুপারিশ সক্রিয় বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, আমরা বিভিন্নভাবে তা কমানোর চেষ্টা করছি। স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দিচ্ছি, দিয়ে এটাকে কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন হবে সেটাই আমরা করব।’

‘যেহেতু সংক্রমণটা ঊর্ধ্বমুখী, দৈনিক সংক্রমণ ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সরকার পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে যেটি উপযুক্ত হবে, সেই সিদ্ধান্তই আমরা নেব।’