থানায় গেলে আগে টাকা, পরে কথা ?

দেশ জুড়ে

প্রশাসনের সর্বত্র ঘুস-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।

তিনি বলেছেন, সরকারি দপ্তরে ঘুস ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ভূমি, পুলিশ ও বন থেকে শুরু করে প্রতিটি দপ্তরে কাজ করতে গেলে ঘুস দিতে হয়। ঘুস ছাড়া থানায় মামলাও করা যায় না। আগে টাকা, তারপর কথা। ঘুস ছাড়া যিনি কাজ করতে পারেন, তিনি ভাগ্যবান। সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটা প্রসঙ্গ টেনে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, Èসার্জিক্যাল মাস্কের দাম কোনোটি চার টাকা, কোনোটির দাম একটু বেশি। কিন্তু মন্ত্রণালয় এগুলো কিনেছে সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ টাকা করে। প্রতিটি মাস্কে সত্তর থেকে আশিগুণ টাকা লুটপাট হয়েছে। তারা আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন বুঝে না। এই করোনার সময় যদি কেনাকাটায় আকাশচুম্বী দুর্নীতি করে, তাহলে দেশ কী করে এগোবে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কী করে বাস্তবায়ন হবে। চিত্কার দিয়ে আকাশে-বাতাসে বক্তৃতা দিয়ে ৭ মার্চের ভাষণ বাজিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করা যাবে না। তার ধ্যানধারণা চিন্তার বিষয়টি মনে করতে হবে।’

তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেত। এমন কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা ক্ষেত্র নেই যেখানে ঘুস ছাড়া কেউ কোনো কাজ করাতে পারেন। আর কেউ পারলে তিনি ভাগ্যবান। ভূমি অফিসে গেলে এসি ল্যান্ডকে ঘুস দেওয়া লাগবে। আরেক জায়গায় গেলে তহশিলদারকে ঘুস দেওয়া লাগবে। একটু বড় কাজ হলে ইউএনওকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) টাকা দেওয়া লাগবে। আরও বড় হলে ডিসি সাহেবকে টাকা দেওয়া ছাড়া হবে না। থানায় তো দারোগা বাবুরা। আপনে মার খাবেন। আপনার লোক আহত হবে, নিহত হবে। এরপরও এফআইআর করতে গেলে আগে টাকা তারপর কথা। এটা কেমন ব্যাপার। ব্রিটিশ আমলেও সবাই ঘুস খেত না। পাকিস্তান আমলেও সবাই খেত না। এখন একেবারে প্রত্যেকেই। ওখান (থানা) থেকে শুরু করে সার্কেল এএসপি, অ্যাডিশনাল এসপি, এসপি-আর কতদূর উপরে আছে জানি না। এর উপরে বললে লাভ কী?’

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘বন, ভূমিসহ অন্য যে দপ্তরে যাব, একই অবস্থা দেখব। জনপ্রশাসনেও করাপশন। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নেই।’

মন্ত্রীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজকে যারা মন্ত্রী আছেন, তাদের দায়বদ্ধতা কী? সবাই গিয়ে হাত তোলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী কি মাস্ক কিনবেন? তিনি কি ভূমি অফিসের তহশিলদারের ঘুস ঠেকাবেন? তিনি কি ওসি ও এসপির ঘুস ফেরাবেন? হোয়ার আর দ্য মিনিস্টারস? হোয়াট ইজ হিজ ডিউটি? তারা রুলস অব বিজনেস পড়েন কি? রাষ্ট্রপতি কি বিভাজন করে তাদের ক্ষমতা দেননি? অনেক ভালো মন্ত্রী এখানে রয়েছেন। তাদের সালাম করি। তাদের লাইফস্টাইল শুনলে ভালো লাগে। কিন্তু যারা চালাতে পারেন না, হয়তো নিজেরা দুর্নীতি করেন অথবা দুর্নীতির কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন।’

আমলাদের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, ‘আমলারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখানে বেগমপাড়া নিয়ে বক্তৃতা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রে আছে। কানাডায় বেশি। কেউ বলেন এটা কয়েক হাজার। আর একটা সমীক্ষায় এসেছে কয়েকশ। একজন বলেছেন, এক হাজারের ওপরে বেগমপাড়া রয়েছে কানাডায়। কারা করেছেন? তারা কি সব এমপি? নো। ম্যাক্সিমাম সরকারি কর্মকর্তা। কিছু ব্যবসায়ী। আর কিছু আমাদের নষ্ট রাজনীতিবিদ। এই অপদার্থ কিছু রাজনীতিকের কারণে সব রাজনীতির নামে চালানো হয়। রাজনীতিবিদ নয়, বেগমপাড়ায় সবচেয়ে বেশি আছেন আমলারা ও সরকারি কর্মচারীরা। তারা দুর্নীতি করে আগে স্ত্রীর নামে বাড়ি কেনে ছেলেকে পাঠান, পরবর্তী সময়ে নিজে যান।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে বলেন, ‘পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা না গেলে দেশের অর্থনীতি সুন্দর করা যাবে না। ঘুস-দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। অনেক দয়া দেখানো হয়েছে। আর দয়া বা ক্ষমা নয়।’

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘২৫ কোটি ডোজ করোনার টিকা আগামী ৬ মাসের মধ্যে আনতে হবে। এজন্য যত টাকা দরকার আমরা দিতে রাজি। দরকার হলে মেগা প্রজেক্ট কমাতে হবে। ভ্যাকসিনের জন্য বরাদ্দ দিয়ে ভ্যাকসিন আনতে হবে।’