লকডাউনের ষষ্ঠ দিন রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৬৭ !

লকডাউনের ষষ্ঠ দিন রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৬৭ !

ঢাকা দেশ জুড়ে

রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির বাসিন্দা খায়রুল হুদা মঙ্গলবার সকালে ফিরছিলেন ধানমন্ডি থেকে। একই রিকশায় তার সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন। শাহবাগে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের রিকশা থামান এবং বিধিনিষেধের মধ্যে এক রিকশায় তিনজনের চলাচলের কারণ জানতে চান। খায়রুল জানান, জরুরি লেনদেনের জন্য দুজনকে নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকে গিয়েছিলেন তিনি। লকডাউনের মধ্যে দু’জনকে নিয়ে চলাচল করায় এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।

 

শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। তিনি সমকালকে বলেন, খায়রুল হুদা অনর্থক দুজনকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছিলেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এখন বের হওয়া নিষেধ। এর পরও অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন কেউ কেউ। এক তরুণ পল্টনে স্টেডিয়াম মার্কেটে যাচ্ছিলেন খেলার সরঞ্জাম কিনতে। মাস্ক ব্যবহার না করে আরেক যুবক যাচ্ছিলেন মতিঝিলে। তাদেরও জরিমানা করা হয়েছে।

 

লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে রাজধানীতে যানবাহন এবং মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে সভা হয়েছে। সভায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের লকডাউন আরও কঠোর করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

করোনা রোধে সরকারের বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনেও রাস্তায় মানুষের চলাচল ও গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। লকডাউনে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ ও র‌্যাব মঙ্গলবারও ছিল কঠোর অবস্থানে। চেকপোস্টগুলোতেও ছিল কড়াকড়ি। অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ায় এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় মঙ্গলবার রাজধানীতে ৪৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত মঙ্গলবার ৩০৫ জনকে দুই লাখ ২৭ হাজার ৪৮০ টাকা জরিমানা করেছেন। এক হাজার ৮৭টি গাড়িকে ২৫ লাখ ২০ হাজার ২৫ টাকা জরিমানা করেছে ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়া এদিন সারাদেশে র‌্যাব ৫০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪১৫ জনকে দুই লাখ ৩৭ হাজার দুইশ’ টাকা জরিমানা করেছেন। ১৯১টি টহল এবং ২০৭টি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। জনসচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমও চালিয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা।

 

 

করোনা প্রতিরোধে গত বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শুরু হলেও সোমবার এর মেয়াদ ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। মঙ্গলবার লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর প্রধান সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেশি ছিল। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির দোকানের পাশাপাশি অন্যান্য দোকানও মাঝেমধ্যে খুলছেন ব্যবাসায়ীরা। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দেখলেই দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন তারা।

 

মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় মিরপুরের টোলারবাগের বাসা থেকে গুলশান-২ নম্বরে কর্মস্থলের উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম। মিরপুর-১, মিরপুর-১০, কচুক্ষেত হয়ে নৌ সদর দপ্তরের সামনে ইউটার্ন ব্যবহার করে তিনি বনানী হয়ে গুলশান-২ নম্বরে যান। অন্যান্য দিনের চেয়ে মঙ্গলবার ইউটার্ন থেকে কাকলী পর্যন্ত গাড়ির প্রচণ্ড চাপ ছিল বলে জানান তিনি।

 

মঙ্গলবার শাহবাগ মোড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ এবং র‌্যাব পৃথক চারটি চেকপোস্ট বসায়। চারটি চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে কোনোভাবেই অপ্রয়োজনে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের না হওয়া ব্যক্তিরা ছাড় পাননি। জরিমানা গুনতে হয়েছে এসব মানুষকে। চারটি চেকপোস্টের কারণে ওই এলাকায় গাড়ির গতি কমে যায়। এতে কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়।