‘জন্ম থেকে কাঁদছি, এবার কাঁদতে নয়, কোপার দাবি নিয়ে এসেছি’

খেলাধুলা

কলম্বিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনালে জিতে গেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিরা উঠে গেছেন ফাইনালে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করে আছেন নেইমাররা। সেমিফাইনালের ম্যাচ শেষে মাঠ থেকে বেরিয়ে শরীরটা তোয়ালে দিয়ে মুছেই মেসি একটু থামুনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। জানালেন তাঁর মনের গহিনের ট্র্যাফিক সিগন্যালে আটকে থাকা কথাগুলো।

 

 

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে মেসির শৈশব নিয়ে। মেসি জানান ফুটবলের সঙ্গে নিজের বেড়ে ওঠার গল্প। উঠে আসে হৃদয়ের গোপন ব্যথাও। তিনি বলেন, ‘কাগজে-কলমে আমার জন্ম ১৯৮৬ সালের পরে। জন্মের পর থেকে বিশ্বকাপ পাইনি। শুধু শুনেছি, এই হলো, এবার হবে। কিন্তু আর হয় কোথায়? শেষ হয় চোখের জলে।

 

 

আশার জাল বুনতে বুনতে আমি ক্লান্ত। জন্ম থেকেই কাঁদছি। আর কাঁদতে ভালো লাগে না। কাপের অভাব যে কী বেদনার! একটা কাপের জন্য আর কত অপেক্ষা করতে হবে—তুমি বলতে পারো, বেণিমাধব?’

এ পর্যায়ে একটু থামুনের পক্ষ থেকে মেসির ভুল ভাঙিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে। বলা হয়, সাক্ষাৎকারগ্রহীতা বেণিমাধব নন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মেসি তখন বলতে শুরু করেছেন, ‘কেউ কথা রাখেনি, ৩৫টা বছর চলে গেল, কেউ কথা রাখেনি।’

 

 

 

তবে বিশ্বকাপ না পেলেও কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা বেশ উজ্জ্বল। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা দল মেসিদের। এ পর্যন্ত ১৪ বার কোপার কাপ জিতেছেন তাঁরা। যদিও শেষটি জিতেছেন প্রায় তিন দশক আগে। তবু জিতেছিলেন তো!

 

 

কিন্তু এই স্বর্ণস্মৃতির জাবর কাটা আর কত দিন? এ প্রশ্ন শুনেই উদাস হয়ে যান লিওনেল মেসি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে বললেন, ‘আমি একা আর কী করব বলুন?’

এই পাল্টা প্রশ্ন শুনেই একটু থামুনের প্রতিবেদকের মনে পড়ে যায় স্বদেশি আকাশি-সাদা সমর্থকদের কথা। কত বিতর্কে বা কুতর্কেই তো এমন প্রশ্ন বারবার শোনা গেছে। ঠিক যেন ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে আর্তনাদ!

মেসিকে সে কথা বলাও হলো। এবার মেসির মুখচ্ছবির যে অবস্থা দেখা গেল, তাতে মনে হলো শৈশবে গ্রামের মেলায় হারিয়ে যাওয়া অজস্র ভাইবোনের ঠিকানা বুঝি মাত্র জানলেন! বললেন, ‘তাই, বাঙালি সমর্থকেরা এটা বলে? এত দিনেও ধৈর্য হারায়নি? জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কাপ নিতে কোনো দিন না দেখলেও আমাদের হয়ে চেঁচায়? ওরা আমার ভাই, আমার বোন, ওদের সঙ্গেই আমার আত্মার বাঁধন।’

 

 

মনে রাখতে হবে, আমরাও কম নই। এ জীবনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে এত কেঁদেছি যে চোখের জল মুছতে আমাদের গামছা ভালো কাজে দেয়। টিস্যুতে আমাদের পোষায় না।

বাঁধন বলতেই চলে এল বার্সার প্রসঙ্গ। মেসি কি বার্সা ছাড়ছেন, নাকি থেকে যাবেন? চুক্তি কি নবায়ন হবে? এসব প্রশ্ন শুনে কৌশলী হলেন লিওনেল মেসি। মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন, এসব নিয়ে টুঁ শব্দটিও করতে চান না তিনি। কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে তা মেনেও নেওয়া হলো।

 

 

ব্রাজিলের নেইমার এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, কোপার ফাইনালে তিনি আর্জেন্টিনাকেই চান। আবার টিস্যু কিনে রাখার বিষয়টিও একটু থামুনকে আরেক কাল্পনিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি। এসব প্রসঙ্গে মেসি বলেন, ‘নেইমার আমাকে চাইতেই পারে। ভালো ছেলে। ওর পা একটু বেশিই পিছলায়। কেন পিছলায়, তা-ও আমি বুঝি। টিস্যুর কথাটা বলেছে বটে, তবে মনে রাখতে হবে, আমরাও কম নই। এ জীবনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে এত কেঁদেছি যে চোখের জল মুছতে আমাদের গামছা ভালো কাজে দেয়। টিস্যুতে আমাদের পোষায় না। ওর টিস্যু ওর কাছেই থাকুক, কাজে লাগতেও পারে।’

 

ফাইনালে তাহলে কে ফেবারিট? ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা? মনে রাখতে হবে, কেউই কারও চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। কোপা আমেরিকার নানা রেকর্ডও আছে এ দুই দলের। ধরুন, এক আসরে সবচেয়ে বেশি ৪৬টি গোল করার রেকর্ড আছে ব্রাজিলের (১৯৪৯ সালে)। আবার এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১২টি গোল করার রেকর্ড এখনো আছে আর্জেন্টিনার দখলে (১৯৪২ সালে, উরুগুয়ের বিপক্ষে)।